
আইইডিসিআর এর তথ্য অনুযায়ী মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে পৌঁছে গেছে ৮৪৯ জনে। এতে আশংঙ্কার তথ্য হল গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৫০ জন নতুন করে আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছেন।
আগের ২৪ ঘন্টায় নতুন আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছিল ৭৪ জন। এ পর্যন্ত জেলায় ঘাতক এ ভাইরাস প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ৪২ জন মানুষের। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে আশার খবর হল গত ৪৮ ঘন্টায় জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জেলার মোট ২ হাজার ৪ শ’ ২৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৬০ জনের। তবে মোট কত জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়েছে তা অবস্য প্রকাশ করা হয়নি। আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছেন ৭৪২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৪২ জন আর সুস্থ্য হয়েছেন ৩০ জন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার ৫৯৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ঘোষিত ফলাফলে আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছেন ৫০৪ জন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ২৮ জন আর সুস্থ হয়েছেন ১৮ জন। নারায়ণগঞ্জ সদর থানা এলাকায় ১২৮৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাপ্ত ফলাফলে আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছেন ১৮৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ১০ জন এবং আরোগ্য লাভ করেছেন ৮ জন।
আড়াইহাজার উপজেলায় ১৮৪ জনের নমুনা সংগ্রহের পর প্রাপ্ত ফলে আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছেন ১৬ জন। এরমধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ৩ জন। রুপগঞ্জ উপজেলার ৯৯ জনের নমুনা সংগ্রহের পর প্রাপ্ত ফলাফলে আক্রান্ত সনাক্ত ১০ জনের মধ্যে মারা গেছেন ১ জন এবং সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন ১ জন।
সোনারগাঁ উপজেলায় ১১১ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছে ১৬ জনের মধ্যে। তাদের মধ্যে ২ জন মারা গেছেন। বন্দর উপজেলায় (নারায়ণগঞ্জ নগরীর বাহিরে) ১৫৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ১০ জন আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১ জন মারা গেছেন।
গত ৮ এপ্রিল থেকে আইএসপিআর ঘোষিত লকড ডাউন এর মধ্যেই ডিলে-ঢালা হয়ে এসেছে। ২৬ এপ্রিল থেকে রপ্তানীমুখি কারখানাগুলোর মধ্যে দেড় শতাধিক কারখানা ইতিমধ্যেই খুলেছে। আজ পর্যন্ত প্রায় ২৫ ভাগ শ্রমিক কারখানাগুলোতে কাজে যোগ দিয়েছে।
আগামী ৪/৫ দিনের মধ্যে সব শ্রমিক কাজে যোগ দিবে বলে জানাগেছে। কারখানা খোলার কারনে বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যাওয়া শ্রমিকেরা আবারো ফিরে আসতে শুরু করেছে। এতে ব্যাপক হারে নতুন সংক্রমণের আশংকা করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।
গত ৮ মার্চ নারায়ণগঞ্জে তিন জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সনাক্তের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এর সংক্রমণ দৃশ্যমান হয়। এরপর থেকে যতই পরীক্ষা করা হচ্ছে ততই সংক্রমিতের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ এখনও সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হারের দিক থেকে দ্বিতীয়।
এদিকে আইইডিসিআর ঘোষিত তথ্য অনুযায়ী গত ৮ মার্চ দেশের প্রথম ৩ জন করোনা আক্রান্ত ব্যাক্তি সনাক্ত হয় নারায়ণগঞ্জে। এরপর ৬ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে মোট আক্রান্ত ছিল ২৩ জন। ৭ এপ্রিল তা হয় ৩৮ জনে।
৮ এপ্রিল এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৬ জনে, ৯ এপ্রিল ৫৯ জনে, ১০ এপ্রিল ৭৫ জনে, ১১ এপ্রিল ৮৩ জনে, ১২ এপ্রিল ১০৭ জনে, ১৩ এপ্রিল ১৪৪ জনে, ১৪ এপ্রিল ১৬৪ জনে ১৫ এপ্রিল ২১৪ জনে। ১৬ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত আক্রান্ত ২৫৫ জন, ১৭ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত ছিল মোট ২৮৯ জন।
১৮ এপ্রিল সকালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০৯ জনে, ১৯ এপ্রিল ৩৮৬ জনে, ২০ এপ্রিল ৩৮৭ জনে, ২১ এপ্রিল ৪৬৯ জনে, ২২ এপ্রিল ৫০৮ জনে, ২৩ এপ্রিল ৫৩২ জনে, ২৪ এপ্রিল ৫৬৬ জনে, ২৫ এপ্রিল ৫৯৪ জনে, ২৬ এপ্রিল ৬২৫ জনে, ২৭ এপ্রিল ৬৯৯ জনে এবং আজ ২৮ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৮৪৯ জনে।
গত ৩০ মার্চ নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর বন্দর থানার রসুলবাগ এলাকায় এক নারী প্রথম জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা যান। তার করোনা আক্রান্তের ফলাফল ঘোষনা হয় ২ এপ্রিল। এরপরই জেলায় করোনার প্রকোপ ব্যাপক প্রকাশ হতে শুরু করে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:২০:৩৬ ১২৮ বার পঠিত