হটস্পট জেলা হিসেবে চিহ্নিত নারায়ণগঞ্জে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রæত বাড়তে থাকায় সরকার নতুন করে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে যাচ্ছে। তবে এবার সাধারণ ছুটি কিংবা লকডাউনের আওতায় না এনে যেসব জেলায় করোনার সংক্রমনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে যে কোন সময় নির্দেশনা জারি হতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এ বিষয় নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর সাথে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, সচিবদের সাথে ইতিমধ্যে জরুরি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত সোমবার জরুরি ভিত্তিতে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। জানা গেছে, দেশ এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকির দিকে এগোচ্ছে বলে অনেকেই বৈঠকে মত দিয়েছেন। এ অবস্থায় করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সব ধরনের নিয়ম-কানুন মেনে চলার বিকল্প নেই। বড় শহরগুলোতেই যেহেতু আক্রান্তের হার বেশি, তাই প্রথমেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর শহরকে নতুন করে নিয়ন্ত্রণের আওতায় এনে প্রয়োজনে লকডাউনের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সাধারণ ছুটির মেয়াদ না বাড়িয়ে গত ৩০ মে থেকে সব কিছু খুলে দেওয়ার পর নারায়ণগঞ্জে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে দায়িত্বশীল কতৃপক্ষ বেশ অস্বস্তিতে আছে। প্রতিদিনই সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে যেসব এলাকায় সংক্রমণ বাড়ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূণ শহর নারায়ণগঞ্জ। আক্রান্ত শহরগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জকে আক্রান্ত ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জকে নিয়েই সরকার বেশি উদ্বিগ্ন। সূত্র জানায়, বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জে করোনা সংক্রমনের বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর কাছে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। এমন জবাবে নারায়ণগঞ্জের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সিটি মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ সিটিতে যাতে অন্য জেলার মানুষ আসা-যাওয়া না করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনা পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে হবে। তৃতীয়ত, এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে মানুষ সহজে টেস্ট করাতে পারে এবং ফলাফল দ্রুত পায়।
মেয়রের এসব দাবির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। বৈঠক থেকে বলা হয়েছে, বৈঠকের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটি ভেবে-চিন্তে সুপারিশমালা তৈরি করবে। কমিটির সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে মেয়রকে জানানো হবে। সূত্রে আরো জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী তার বক্তব্যে বলেন, ঈদের আগে গার্মেন্ট কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না। ঈদের আগে গার্মেন্ট না খুলে দিয়ে ঈদের পর অন্তত ১০-১৫ দিন পর্যন্ত টানা ছুটি বৃদ্ধি করলে নারায়নগঞ্জে করোনা সংক্রমনের উচ্চ ঝুঁকির দিকে যেত না। সরকার সবকিছুই করছেন, কিন্তু এই বৈঠকটি যদি ছুটি বাতিলের আগে মেয়রদের নিয়ে করা হতো তাহলে ভালো হতো। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কয়েক কোটি মানুষের বাস। আন্তজেলার পরিবহন বন্ধ না করে এই সিটিতে কীভাবে সংক্রমণ রোধ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ওয়ার্ডভিত্তিক রেড, ইয়েলো এবং গ্রিন জোনে ভাগ করা হতে পারে। অবশ্য বৈঠকে মেয়র জানতে চেয়েছেন, জোন কীভাবে ভাগ করা হবে। তখন সম্ভাব্য একটি রূপরেখা দিয়ে বলা হয়েছে, যারা করোনা আক্রান্তের টেস্ট দিচ্ছেন সেখানে ওই ব্যক্তির সব তথ্য থাকে। টেস্টে যারা পজিটিভ হবেন তাদের তথ্য রোগী নিজে জানার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার বা চেয়ারম্যানদের জানিয়ে দেওয়া হবে। তখন ওয়ার্ড ভিত্তিক রোগীর সংখ্যা হিসাব করে জোন ঠিক করা হবে। যেসব এলাকায় রোগী বৃদ্ধির হার দ্রুত তা হবে রেড জোন হবে। বৈঠকের বিষয়ে নারয়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, কাদের স্বার্থে গার্মেন্ট খোলা হয়েছিল, কাদের পরামর্শে ঈদের পর তড়িঘড়ি করে সব খুলে দেওয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। এসব সিদ্ধান্ত সরকারের বিপক্ষে গেছে। তবে কিভাবে শিল্পাঞ্চল এলাকা হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত নারায়ণগঞ্জকে করোনা সংক্রমনের থাবা থেকে সাধারন মানুষকে নিরাপত্তা রাখা যায় সে বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর ব্যাতিক্রম ঘটলে নারায়ণগঞ্জ মৃত্যুপুরী জেলা হিসেবে পরিচিতি পেতে বেশি সময় লাগবে না। তাই আমার দাবি, নারায়ণগঞ্জবাসীকে নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন এমনটাই প্রত্যাশা করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৪৮:৩০ ২৫১ বার পঠিত