
প্রতিদিনের মত স্বাভাবিকভাবেই শহরের শায়েস্তা খাঁ সড়কে চলছিল সবকিছু। সড়কের দুই পাশ হকাররা পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন। ক্রেতা বিক্রেতারা যে যার মত বেচাকেনা করছিলেন। এমন সময় হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি। হঠাৎ বৃষ্টিতে হকচকিয়ে যায় উপস্থিত সকলে। তড়িগড়ি করে বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য যে যার মত একটু ছাদ খুঁজে নেয়। বৃষ্টি তখন প্রায় শেষ। হঠাৎ সড়কের এক কোনায় শোরগোল শোনা গেল। এক যুবকের চিৎকার, ‘বাবাগো-মাগো’। কিছু লোক মারছিল সে যুবককে। লাথি, ঘুষি আর থাপ্পরের তোড়ে সড়কে লুটিয়ে পড়ে সে। উৎসুক জনতার মধ্যে থেকে কেউ কেউ বলে উঠছিল, ‘ছিনতাই করে। মার, আরো মার বেটাকে।’ মার খাওয়ার এক পর্যায়ে ঠোট কেটে রক্ত বের হতে থাকে তার। ঠোটের রক্তে যুবকটির দাতগুলোও লাল হয়ে আসে। তারপরও কেউ কেউ এসে মারে চলে যাচ্ছিল তাকে। পাশের সকলে যখন ঘটনা বিশ্লেষনে ব্যস্ত তখন সুযোগ বুঝে দৌড়ে পালিয়ে যায় ওই যুবক।
এরপর দেখা যায়, আরেক ব্যক্তিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে লোকজন। শার্ট-প্যান্ট পড়া ওই ব্যক্তি জানালেন নিট কনসার্ন গার্মেন্টসে চাকরি করেন তিনি। নাম মো. পারভেজ। ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন তিনি। পারভেজ ঘটনার ব্যাখ্যা করে বলেন, বেলা ৩টায় নিতাইগঞ্জে অবস্থিত সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে কুরিয়ার সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রিকশায় যাচ্ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু সড়ক দিয়ে কালিরবাজার এলাকার মোড়ের সামনে আসতেই ওই যুবক তার রিকশা আটকায় আর বলে, ‘বিরিয়ানি খাবো টাকা দে।’
পারভেজ জানান, সে সময় ওই যুবকের সঙ্গে আরো তিন যুবক ছিলো। তাই তর্ক না করে ৫০০ টাকার একটি নোট বের করে দেন তিনি। টাকা দিতেই তারা পারভেজকে রিকশা থেকে নামিয়ে আনে এবং তিন জন তিনটি ছুরি ধরে বলে, যা আছে দিয়ে দে। এ সময় পারভেজের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনসহ মানিব্যাগ নিয়ে নেয়। সবকিছু নিয়ে পালানোর সময় পারভেজ চিৎকার করে পিছু নেয় তাদের। পারভেজের চিৎকার শুনে এক ব্যক্তি ছিনতাইকারীদের মধ্যে একজনকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়। যুবকটি পড়ে গেলে আশপাশের লোকজন তাকে ধরে এবং মারধর করতে থাকে। আর বাকিরা পালিয়ে যায়।
উক্ত এলাকার দোকানিরা জানান, এলাকাটিতে বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সামনে প্রায় সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ছিনতাইয়ের ঘটনা আরও বেড়েছে। তারা অভিযোগ করেন বলেন, ট্রাফিক পুলিশ সামনে থাকলেও ছিনতাইয়ের সময় সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক চা দোকানি বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই এখানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে, চুরি হচ্ছে। শহরের কালিরবাজার মোড়, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সামনে এবং দুই নম্বর রেলগেট এলাকায় এ ঘটনাগুলো বেশি ঘটে। ওরা সিন্ডিকেট করে একেকদিন একেক এলাকায় কাজ করে। ওদের মধ্যে কিছু সরাসরি ছিনতাইয়ে অংশগ্রহণ করে এবং বাকিরা আশেপাশে থাকে। ওদের মধ্যে কেউ ধরা পড়লে বাকিরা ভিড়ের মধ্যে থেকে তাদের পালাতে সাহায্য করে। যেমনটা আজকের ঘটনায় ঘটেছে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৯:১৪:০০ ২৮৩ বার পঠিত