বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড জিয়া ও মার্কিন দূতাবাসের সংযোগে: লরেন্স লিফশুজ

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড জিয়া ও মার্কিন দূতাবাসের সংযোগে: লরেন্স লিফশুজ
শনিবার, ২২ আগস্ট ২০২০



---

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পেছনে জিয়াউর রহমান ও ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সংযোগের বিষয় তুলে ধরে এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফশুজ।

বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় যোগ দিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়টি কেবল বাংলাদেশের বিষয় নয়, এটা আমেরিকারও বিষয়।

লরেন্স লিফশুজ আরও বলেন, যারা হত্যাকাণ্ডের পেছনে ছিল তারা জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া আগায়নি। আর জিয়াউর রহমানের পেছনে ছিল আমেরিকা। এই পরম্পরা তদন্তের প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ ও আমেরিকা দুই দেশের জনগণ মিলে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে।

সিআরআই আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ১৯৭৫: সেটিং দ্য ক্লক ব্যাক’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন পঁচাত্তরে ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউয়ের দক্ষিণ এশিয়া প্রতিনিধি লিফশুজ।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ অনুসন্ধানের পর জিয়ার আমলে সামরিক আদালতে কর্নেল তাহেরের বিচারের অনুসন্ধানও করেছিলেন এই সাংবাদিক। তখন বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাকে।

শুক্রবারের আলোচনায় যোগ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা নেয়ার ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান ও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সংযোগের বিষয় তুলে ধরেন লিফশুজ।

এ সময় তিনি বলেন, এখন আমরা জানি, ক্যুর এক সপ্তাহ আগে জিয়াউর রহমান মার্কিন দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন; আমরা এও জানি সিআইএয়ের স্টেশন চিফের (ফিলিপ চেরি) সঙ্গে প্রাইভেট মিটিংও হয়েছিল ঢাকায়। মার্কিন দূতাবাসে এ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল যে, কী হতে চলেছে। রাষ্ট্রদূত ডেভিস বস্টার খুবই বিষণ্ন ও বিরক্ত ছিলেন, কারণ অন্য দূতাবাস কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না।

ঘটনার ছয় মাস হত্যার পরিকল্পনা হয়েছিল দাবি করে লিফশুজ বলেন, পরিকল্পনা চূড়ান্তের এক সপ্তাহ আগে জিয়া ও চেরির সঙ্গে ঢাকায় এক ব্যবসায়ীর বাসায় সভা হয়, কীভাবে এটা সম্পন্ন হবে তা নিয়ে। জিয়া ছিলেন সুচারু পরিকল্পনার কেন্দ্রে। পররবর্তীতে তার (জিয়া) উত্থান থেকে আমরা বুঝতে পারি, সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসাবে জিয়া অন্য সৈন্যদের ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরের যাওয়া ঠেকিয়েছিলেন। মাসের পর মাস পরিকল্পনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল। তার দায়িত্ব ছিল সেনাবাহিনীর কেউ যাতে এই ক্যুর বিরুদ্ধে অবস্থান না নেয়।

তিনি বলেন, সব ক্ষমতা নিজের করতে গিয়ে জিয়া বহু দ্বন্দ্ব-সংঘাতের দিকে গিয়েছেন, বিশেষ করে ১৯৭৭ সালের অক্টোবরের ঘটনায়, সেনাবাহিনীর লোকজন যখন জানল জিয়া এর মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এবং বিভিন্ন ঘটনায় প্রমাণ হচ্ছিল পাকিস্তান ও অন্যদের সঙ্গে তার সংযোগ রয়েছে।

“কর্নেল শওকত আলী ও মইন চৌধুরী বর্ণনা করেছেন কীভাবে প্রায় তিন হাজার সেনা সদস্যকে ওই সময়ে গ্রেপ্তার ও হত্যা করা হয়েছিল।”

আলোচনায় যোগ দিয়ে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশকে ঠিক পথে এগিয়ে নিচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু। অনেক বাধা সত্ত্বেও দেশ ঠিক পথে আগাচ্ছিল।

“সামরিক শাসন এসে মানুষের কোনো মত প্রকাশের সুযোগ ছিল না, মানুষের জন্য নীতি প্রণয়ন হয়নি। ভয়, আতঙ্ক আর নিবর্তনমূলক শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।”

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাস্তববাদী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সামাজিক কাঠামো, অর্থনৈতিক কাঠামো ঠিক করে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “প্রবৃদ্ধি ঠিক আছে। কিন্তু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সমতার সঙ্গে প্রবৃদ্ধির সংযোগ দরকার, যেটা শেখ হাসিনার নীতি ছিল ১৯৯৬ সালের সরকারে। এটাকে খুব ভালোমত ফিরিয়ে আনতে হবে।

“চলমান অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করতে হবে, আনতে হবে সমতা- যেটা বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনার কেন্দ্রে ছিল।”

১৫ আগস্টের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বলেন, “প্রাথমিকভবে হতভম্ব অবস্থা ও আশাহীনতা ছিল জনগণের মধ্যে, ক্ষোভও ছিল। কিন্তু আমরা বিচার চাইতে পারিনি, সংগঠিত হতে পারিনি। অন্যদিকে, আমরা পুরো প্রজন্মকে মিথ্যা ইতিহাসের উপর বড় করেছি। পুরো পরিবেশ ছিল মুনাফেকি আর নানা রকমের দ্বৈততার।”

তিনি বলেন, “একটি প্রজন্ম ইতিহাসের মর্ম ছাড়া হয়ে বড় হয়েছে, নিজস্বতা ছাড়া বড় হয়েছে। পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাচ্ছে। এই ১১ বছর আমরা একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, এই প্রজন্ম জানতে পারছে একাত্তর ও বঙ্গবন্ধু কী ছিল।”

সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান বলেন, “১৯৭৫ সালের আগস্ট হত্যাকাণ্ড বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের পথ উন্মোচন করেছিল। এটা আমাদের অসাম্প্রদায়িক নীতির উপর আঘাত করেছে, যেটার উপর ভিত্তি করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম, এই হত্যাকাণ্ড আমাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছে। আমরা দেখেছি, পরাজিত ও পাকিস্তানিদের দোসররা ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু আমরা নাৎসি ও জাপানি নির্যাতনকারী সেনাদের সহযোগীরা কখনো ক্ষমতায় আসেনি।

পঁচাত্তরে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লিপ্ততার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধু ভোরে খুন হয়েছেন, চার-পাঁচ ঘণ্টা পার হয়েছে, কিন্তু একজন সেনা কর্মকর্তা কিংবা নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা, কোনো বাহিনী সামনে এগিয়ে আসেনি ক্যুকারীদের গ্রেপ্তার করতে।

“সরকারকে বলবৎ রাখতে কাজ করেনি, যেখানে উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন। এ কারণে আমার মনে হয়, আরও অনেক কিছু ঘটেছে এবং আরও অনেকে এটার সুবিধাভোগী ছিল। আমরা এখনো সেটা নিয়ে ভুগছি।”

আলোচনায় যোগ দেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী ফারুক রহমানের সাক্ষাৎকারগ্রহণকারী ঐতিহাসিক ও নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার সলীল ত্রিপাঠি, যিনি ওই সময় সাংবাদিক ছিলেন।

ওই সাক্ষাৎকার নেয়ার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওই সময়ে তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা আমি দেখিনি। খুব সহজভাবে স্বীকার করে যাচ্ছিলেন সবকিছু। যেটা আমাকে অবাক করেছিল।

“আত্মস্বীকৃত এসব খুনীকে যেভাবে বিচার থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে, তা কোনোভাবে ঠিক হয়নি।”

সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, সে এটা স্বীকার করেছে এবং নিজেকে একজন রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছে। এটা আমার কাছে ফিকশনের মতো মনে হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৯:০০   ৮৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
গুজব উপেক্ষা করে জনগণ ভ্যাকসিন নিচ্ছে
অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক চিহ্নিত সমস্যাগুলো যথাযথ সংশোধন করা হবে - ভূমি সচিব
৬টি সেক্টরকে শিশুশ্রমমুক্ত ঘোষণা করলো সরকার
ফসল উৎপাদন বাড়াতে অঞ্চল ভিত্তিক ‘জোন ম্যাপ’ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র - এলজিআরডি মন্ত্রী
হঠাৎ অজানা কারণেই বেড়ে গেলো পেঁয়াজের দাম
স্পীকারের সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেজান্ড্রা বের্গ ভন লিনডে-র সৌজন্য সাক্ষাৎ

আর্কাইভ