ছয় দফা ছিল বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব প্রচেষ্টা - প্রধানমন্ত্রী

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » ছয় দফা ছিল বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব প্রচেষ্টা - প্রধানমন্ত্রী
বুধবার, ২৬ আগস্ট ২০২০



---

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারো পরামর্শে নয়, ছয়দফা প্রস্তাব ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজস্ব প্রচেষ্টা। স্বাধীনতা অর্জনে ছয় দফার ভূমিকা অপরিসীম। বিজয় সমুন্নত রাখতে জাতির পিতার দেখানো পথেই এগিয়ে যেতে হবে।

আজ বুধবার (২৬ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন সরকারপ্রধান।

পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে স্বৈরাচার আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ডাকা এক জাতীয় সম্মেলনে পূর্ব বাংলার জনগণের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন।

পরবর্তীতে ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি দেশে ফিরে ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করেন এবং বাংলার আনাচে-কানাচে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে জনগণের সামনে ৬ দফার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। বাংলার সর্বস্তরের জনগণ তাতে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায়। ৬ দফা দাবি আদায়ে ঢাকাসহ সারা বাংলায় আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল পালিত হয় ১৯৬৬ সালের ৭ জুন। হরতাল চলাকালে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গীতে সৈন্যদের গুলিতে মনু মিয়া, সফিক ও শামসুল হকসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন। গ্রেপ্তার হন অনেকে। স্বাধিকারের এই আন্দোলন ও আত্মত্যাগের পথ বেয়েই শুরু হয়েছিল বাঙালির চূড়ান্ত স্বাধীনতার সংগ্রাম।

শেখ হাসিনা বলেন, কারও পরামর্শে নয়, সম্পূর্ণ নিজস্ব ধারণা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা প্রণয়ন করেছিলেন। আর দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে ছয় দফার ভূমিকা অনেক।

করোনাভাইরাসের কারণে সশরীরে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে না পেরে আক্ষেপ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য এটুকু যে যেখানে নিজে উপস্থিত থেকে পুরস্কারটা হাতে তুলে দেয়া যেত… আরও খুশি হতে পারতাম। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে আজকে করোনাভাইরাস নামে এমন একটা ভাইরাস শুধু বাংলাদেশ না, সারাবিশ্বে দেখা গেছে। আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অনেকটা অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। করোনাভাইরাসের কারণে কারও জীবনটা ক্ষতিগ্রস্ত হোক সেটা আমরা চাইনি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যে স্বাধীন হলো, এই স্বাধীনতার চিন্তাটা জাতির পিতা কখন নিয়েছিলেন? কেন নিয়েছিলেন? পাকিস্তান নামক যে রাষ্ট্রটা তৈরি হয়েছিল সেখানে পূর্ব পাকিস্তান বা আমাদের পূর্ব বাংলা ছিল তার একটা অঙ্গরাষ্ট্র। পাকিস্তানের যে আন্দোলন সেই আন্দোলনটাও কিন্তু হয়েছিল আমাদের এই ভূখণ্ডে। এখানে কিন্তু পশ্চিমাদের অবদান খুব একটা ছিল বলে আমরা দেখি না। সেই সময়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, তার সঙ্গে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে কয়েকটি আলাদা আলাদা রাষ্ট্র হবে। কিন্তু সেটাকেও পরিবর্তন করা হয়েছিল। পাকিস্তান হলো এবং আমাদের এই ভূখণ্ডকে তার একটা অঙ্গরাজ্য করা হলো। দুর্ভাগ্য হলো পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর সবচাইতে বঞ্চনার শিকার হতে হলো আমাদের অর্থাৎ বাঙালিদের। রাজধানী নিয়ে গেল করাচিতে যেখানে মরুভূমি। আমাদের মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নিল। বাংলায় কথা বলতে দেবে না, উর্দু শিখতে হবে। এরই প্রতিবাদ শুরু হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

‘আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি উদ্যোগ নিলেন। তারই প্রস্তাবে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার একটা কমিটি গঠন হলো এবং সেখান থেকে আন্দোলন শুরু। রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, আমাদের দেশের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী অধিকার আন্দোলন-এসব আন্দোলনগুলো নিয়েই কিন্তু আবার নতুন করে যে সংগ্রাম শুরু, এই সংগ্রাম পথ বেয়েই কিন্তু আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আটান্ন সালে যখন তিনি (বঙ্গবন্ধু) গ্রেফতার হন সেই সময় থেকেই তিনি প্রস্তুতি নিলেন কীভাবে এই ভূখণ্ডের মানুষকে স্বাধিকার এনে দিবেন। বাষট্টি সালে তার একটা উদ্যোগ ছিল সমগ্র বাংলাদেশ প্রত্যেকটা এলাকায় নিউক্লিয়াস ফর্ম করে এদেশের মানুষকে সচেতন করা। এরই একটা পর্যায়ে তিনি আবার গ্রেফতার হলেন। ১৯৬৫ সালে যখন ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হলো তখন আমরা একেবারেই অরক্ষিত ছিলাম। তখনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিদ্ধান্ত নিলেন এবং তিনি এই ছয় দফা প্রণয়ন করেন।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সেই অগ্রযাত্রাকে স্তিমিত করেছিল। পনেরো আগস্ট পরাজিত শক্তির উত্থান ঘটেছিল। তারা আমাদের বিজয়কে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা আমাদের যে পথ দেখিয়ে গেছেন, সেই পথ ধরেই দেশকে এগিয়ে নিতে চাই। দেশকে যদি আমরা ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত করে সোনার বাংলা হিসেবে গড়তে চাই, অবশ্যই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে হবে।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাজাতে দেওয়া হতো না। ভাষণ বাজাতে চাওয়ায় অনেককে গ্রেপ্তার পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে এখন সবাই বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারছে। নতুন প্রজন্মের আগ্রহটা, বিশেষ করে তারা যে সুন্দরভাবে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছে এজন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ইতিহাস তার আপন গতিতে এগিয়ে যায়। কেউ ইতিহাস মুছতে পারে না এটা আজকে প্রমাণিত সত্য। আজকে শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্ব, জাতিসংঘও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে করোনাভাইরাসের কারণে তা হয়নি। অবশ্য ইতোমধ্যে তারা একটা স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে।’

করোনার কারণে জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত না করতেই ডিজিটাল আয়োজন করা হচ্ছে বলে অনুষ্ঠানে জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫:২১:০১   ১০৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
গুজব উপেক্ষা করে জনগণ ভ্যাকসিন নিচ্ছে
অর্পিত সম্পত্তি বিষয়ক চিহ্নিত সমস্যাগুলো যথাযথ সংশোধন করা হবে - ভূমি সচিব
৬টি সেক্টরকে শিশুশ্রমমুক্ত ঘোষণা করলো সরকার
ফসল উৎপাদন বাড়াতে অঞ্চল ভিত্তিক ‘জোন ম্যাপ’ প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
দেশের সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র - এলজিআরডি মন্ত্রী
হঠাৎ অজানা কারণেই বেড়ে গেলো পেঁয়াজের দাম
স্পীকারের সাথে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেজান্ড্রা বের্গ ভন লিনডে-র সৌজন্য সাক্ষাৎ

আর্কাইভ