নরসিংদীর শিবপুরের প্রায় ১৮ মাস আগে নাজমা বেগম (২৪) নামে এক নারীকে গলা কেটে হত্যার মূল রহস্য উৎঘাটন ও প্রকৃত খুনিকে গ্রেফতার করেছে নরসিংদীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত ২৮ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার (পিবিআই) নরসিংদীর পুলিশ সুপার মো: এনায়েত হোসেন মান্নানের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। নিহত নাজমা নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের মমতাজ আলীর মেয়ে।
ঘটনার বিবরণী, মামলার এজাহার ও পিবিআই সূত্রে জানা যায়, গত ০৭/০৬/২০১৯ইং শিবপুর মডেল থানায় মামলা নং ০৬ এর আসামী নজরুল ইসলাম ধারালো অন্ত্র দিয়ে তার স্ত্রী নাজমা আক্তার (২৪)কে গলা কেটে নির্মম ভাবে হত্যা করে রুমের বাহির দিকে ছিটকানী আটকিয়ে পালিয়ে যায়। হত্যার পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক ঘটনার দিন ০৬/০৬/২০১৯ ইং ঘটনাস্থলের পাশে একটি ফার্মেসী থেকে ঘুমের ট্যাবলেট ক্রয় করে। পরে কৌশলে রাতে ভিকটিম নাজমা বেগমকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় তার স্বামী নজরুল। নাজমা ঘুমের ওষুধের প্রভাবে গভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়লে আসামী নজরুল ইসলাম পরিকল্পনা মোতাবেক তার ধারালো ছুরি দিয়ে ঘুমন্ত নাজমা বেগমের গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যার সময় তার শরীরে লেগে থাকা রক্ত তার ব্যবহৃত স্যান্ডো গেঞ্জি দ্বারা মুছে ফেলে। পরে নজরুল ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাবার সময় প্রায় ২০ গজ দুরে গলি পথের পাশে কলা বাগানের ভিতরে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো ছুরিটি ফেলে দেয়। ঘাতক নজরুল ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়ে টঙ্গী একটি ড্রেনে রক্তমাখা গেঞ্জিটি ফেলে দেয়। পরবর্তীতে সে পালিয়ে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করতে থাকে। নজরুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর এমনই চাঞ্চলকর তথ্য দিয়ে স্বেচ্ছায় স্বীকার করে হত্যার পূর্ণ ঘটনার বিবরন দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
ঘটনার বিবরণীতে জানা যায়, নরসিংদীর পিবিআই পুলিশ সুপার মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নানের দিক নির্দেশনায় ও পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের লাগাতার অভিযানের মাধ্যমে সুদূর ভুরুঙ্গামারী কুড়িগ্রাম থেকে আসামী নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। মামলার ঘটনা সংক্রান্তে আসামী নজরুল ইসলাম স্বীকার করে, নাজমার সাথে একই গার্মেন্টেসে চাকুরী করার সুবাদে তাদের পরিচয় হয়। তখন নাজমা বেগমের প্রথম স্বামী আঃ লতিফের সাথে সংসার করছিল। পরিচয়ের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠলে তার প্রথম স্বামী আঃ লতিফকে তালাক প্রদান করে। দুজনে বিবাহের সিদ্ধান্তে নাজমা বেগমকে নজরুল ইসলাম তাদের বাড়ীতে নিয়ে যায়। সেখানে স্থানীয় নিকাহ রেজিস্টার দ্বারা কাবিন করে তারা পারিবারিকভাবে বিবাহ করে। বিবাহের পর তারা টঙ্গী এলাকায় ভাড়াটিয়া বাসায় সংসার করতে থাকে।
এ দিকে বিভিন্ন পারিবারিক অশান্তি, দুটি সংসারের ঘানি টানা এবং নজরুলের প্রথম স্ত্রী ফাতেমা বেগমের গর্ভে জন্ম নেয়া প্রথম পুত্র সন্তান সোহাগ(১১) কে দেখাশুনা করার জন্য এক পর্যায়ে আসামী নজরুল ইসলাম ভিকটিম নাজমা বেগমকে পারিবারিকভাবে ডিভোর্স দেয়। ঐ সময় ভিকটিম নাজমা বেগম ছয় মাসের অন্তস্বত্ত্বা ছিল। গর্ভাবস্থায় ডিভোর্স কার্যকরী হয়না মর্মে তারা আলোচনা করে কিছু দিন অতিবাহিত হবার পর একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে আবার একত্রে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে এক লক্ষ টাকা দেনমোহরে স্থানীয় মাওলানা দ্বারা তাদের পূনরায় বিবাহ হয়। বিষয়টি বিজ্ঞ নোটারী পাবলিক এর কার্যালয়, নরসিংদী’র স্মারক নং ৮৮০৩ তারিখ ৩০/১০/২০১৭ খ্রিঃ মোতাবেক একটি এফিডেভিট করে। পরে নজরুল ইসলাম পুনরায় ভিকটিম নাজমা বেগমের সাথে ঘটনাস্থল বাসায় অবস্থান করে সেখান থেকে তার কর্মস্থলে পূর্বের মতো যাওয়া আসা করতে থাকে। ইতোমধ্যে তাদের ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করে। তার নাম বায়েজিদ। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল মাত্র এক বছর। দুই দিকে দুটি সংসার চালানোর টানা পোড়নের সংসারের ঘানি টানতে বেসামাল হয়ে পড়ায় আসামী নজরুল ইসলাম তার দ্বিতীয় স্ত্রী ভিকটিম নাজমা বেগমকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:২৩:৫৪ ৬৫ বার পঠিত