চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানাধীন আকবর শাহ এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে থাকা বসবাসকারীদের উচ্ছেদে অভিযানে নেমেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ জোবাইর আহমেদের নেতৃত্ব অভিযান শুরু হয়।
চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোতে প্রভাবশালীদের সহায়তায় নিম্ন আয়ের লোকজন অবৈধভাবে বসতি গড়ে তোলে। জেলাটির প্রায় ৩০টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বহু লোক বসবাস করে। প্রতি বছরই চট্টগ্রামে পাহাড় ও মাটি ধসে বিভিন্ন এলাকায় লোকজন মারা যায়।
২০০৭ সালের ১১ জুন অধিক বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়, দেয়াল ও মাটি ধসে ১২৭ জন মারা গিয়েছিল। এবার বর্ষার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। নগরের আকবরশাহ রেলওয়ে কলোনিতে অবৈধ বসতি উচ্ছেদের মাধ্যমে এই অভিযানে নেমেছে জেলা প্রশাসন।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) জোবাইর আহমেদ জানান, ‘আমরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। এর আগে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির সব লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। কী পরিমাণ অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করা হবে তা পরে জানানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আকবর শাহ এলাকার রেলওয়ে কলোনি এলাকায় ৮-১০টি পাহাড়ে এক থেকে দেড়শ ঝুঁকিপূর্ণ ঘর আছে। আমরা সবগুলো ঘর আজকের অভিযানে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করব।’ অভিযানে পুলিশ, আনসার সদস্যরাসহ কেজিডিসিএল, পিডিবি, চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মীরা সহযোগিতা করছেন।
চট্টগ্রামের পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি ইতোমধ্যে ৩০টি পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সেগুলো হলো- সিআরবি পাহাড়ের পাদদেশ, টাইগারপাস-লালখান বাজার রোড সংলগ্ন পাহাড়, টাইগারপাস মোড়ের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ, মোজাফফর নগর পাহাড়, কাট্টলি থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত পাহাড়, সলিমপুর বাস্তুহারা পাহাড়, প্রবর্তক পাহাড়, গোলপাহাড়, ইস্পাহানি পাহাড়, বন গবেষণাগার ও বন গবেষণা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন পাহাড়, জয়পাহাড়, চট্টেশ্বরী হিল, মতি ঝর্ণা ও বাটালি হিল সংলগ্ন পাহাড়, রেলওয়ে এমপ্লয়িজ গার্লস স্কুল সংলগ্ন পাহাড়, ফয়’স লেক আবাসিক এলাকা পাহাড়, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়, গরীবুল্লাহ শাহ মাজারের পাশের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়, ডিসি হিলের চেরাগী পাহাড়ের দিকের ফুলের দোকানের অংশ, পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশনের পাহাড়, এ কে খান অ্যান্ড কোং পাহাড়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন পাহাড়, কৈবল্যধামের বিশ্ব কলোনির পাহাড়, মিয়ার পাহাড়, লালখান বাজার চান্দমারি রোড সংলগ্ন জামেয়াতুল উলুম ইসলামি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের পাহাড়, ফরেস্ট রিচার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমির উত্তর পাশের মীর মোহাম্মদ হাসানের মালিকানাধীন পাহাড়, ইস্পাহানি পাহাড় সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের হারুন খানের মালিকানাধীন পাহাড়ের পশ্চিমাংশ, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা সংলগ্ন পাহাড়, লেক সিটি আবাসিক এলাকার পাহাড় ও সিডিএ অ্যাভিনিউ রোডের পাশে অবস্থিত ব্লোসম গার্ডেন সংলগ্ন পাহাড়।
এসব পাহাড়ের মধ্যে ১৩টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব পাহাড়ের সব বসতি অবৈধ। কয়েকজন ব্যক্তি পাহাড় কেটে এসব বসতি নির্মাণ করেছেন।
১৯৯৯ সালের ১৩ আগস্ট চট্টগ্রামের সিআরবি পাহাড়ের একাংশের সীমানা প্রাচীরসহ পাহাড় ধসে মারা যান ১০ জন। ২০০০ সালের ২৪ জুন চবি ক্যাম্পাসের আবাসিক এলাকাসহ নগরীতে পাহাড় ধসে ১৩ জন; ২০০৭ সালের ১১ জুন নগরীর সাত স্থানে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়।
২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট মতিঝর্ণায় পাহাড় ধসে ১১ জন, ২০১১ সালের ১ জুলাই বাটালি হিলের প্রতিরক্ষা দেওয়াল ধসে ১৭ জন, ২০১২ সালের ২৬ জুন নগরীর ৪ স্থানে পাহাড় ধসে ১৮ জন, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি খুলশী থানার ইস্পাহানি গোলপাহাড় ধসে একজন, ২৮ জুলাই লালখান বাজারের টাংকির পাহাড় ধসে দুইজন।
২০১৪ সালের ১৮ জুলাই ঈদ-উল-ফিতরের রাতে দুই স্থানে পাহাড় ও দেয়াল ধসে পাঁচ শিশুসহ ছয়জন এবং ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই এবং ২১ সেপ্টেম্বর পাহাড় ধসে ৮ জনের মৃত্যু হয়।
ঢাকাটাইমস/২০মে/জেজে/এমআর
বাংলাদেশ সময়: ১৩:২২:১৩ ৪৭১ বার পঠিত