নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী জানিয়েছেন, তিনি বিএনপি ও সেনা সমর্থিত সরকারের সময় পৌরসভার মেয়র থাকাকালে অনেক কাজ করেছেন। কিন্তু এখন তার দল ক্ষমতায়, তবুও কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধার মুখোমুখি হন।
বুধবার নারায়ণগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য দেন মেয়র আইভী।
জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা সংস্থা (জাইকা) এর অর্থায়নে বাস্তবায়িত সিটি গভর্ন্যান্স প্রকল্পের অধীনে গঠিত নগর সমন্বয় উন্নয়ন কমিটির ওই সভার আয়োজন করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন।
মেয়র বলেন, ‘সিটি করপোরেশনে বিগত পাঁচ বছর অনেক কাজ করেছি। তবে অনেকেরই সহায়তা পাইনি। কিন্তু জনগণকে নিয়ে আমি এ কাজগুলো করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা একে অন্যের পরিপূরক। সবাই মিলে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। তবেই সমস্যা সমাধান করতে পারবো।’
নারায়ণগঞ্জ নগরীর যানজট, হকার, অবৈধ স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন সমস্যার বর্ণনা দিয়ে আইভী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে বড় সমস্যা ট্রান্সপোর্ট। ডিসি ও এসপির সমন্বয়ের অভাবে ভুগছে সিটি করপোরেশন। শহরের যানজট হলেই গালি শুনতে হয় আমাকে। তিনটি প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগের অভাবে কাজ হচ্ছে না। যৌথ উদ্যোগের খুবই প্রয়োজন।’
সিটি করপোরেশনের জায়গায় অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদ প্রসঙ্গে আইভী বলেন, ‘রাস্তার উদ্বোধন করবো সেখানেও মাদক দূর করতে বলে। এ মাদকের সঙ্গে কয়েকজন পুলিশসহ জনপ্রতিনিধিরাও জড়িত আছে। এমনকি আমাদের কাউন্সিলরদের ছত্রছায়ায় মাদক বিক্রি হয়। কিন্তু প্রশাসন যদি মনে করে নারায়ণগঞ্জে মাদক ঢুকবে না তাহলে মাদক ঢুকতে পারবে না। আমার সাহস আমার জনগণ। সিটি করপোরেশনের ৯৫ ভাগ জায়গা উদ্ধার করেছি কোনো প্রশাসনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়নি। হাইকোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তারপরও ভাঙা থামাইনি। পরে আদালতে ক্ষমা চেয়েছি। থাকলে থাকবে মেয়রশিপ না থাকলে নাই। কিন্তু জনগণের জন্য যেকোনো অবৈধ স্থাপনা ভেঙে কাজ করবোই। পরে প্রয়োজনে আবার মাফ চাইবো।’
সভায় নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ‘হকার যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সপ্তাহে একাধিকবার মোবাইল কোর্ট করা হচ্ছে। প্রয়োজনে সেটা বাড়িয়ে দেয়া হবে। এছাড়াও নগরীর উন্নয়নে যেকোনো এনওসি দ্রুত দেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলবো এবং সব ধরনের সহযোগিতা করবো।’
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এক বছরে জেলার শীর্ষ তিন মাদক ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। আমাদের কাছে আরো নামের তালিকা আছে। জীবন আগে তাই সবাইকে সতর্ক করে দিচ্ছি। অন্যথায় আমরা কঠোর অভিযানে যাবো। সব সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করা হবে।’
নারায়ণগঞ্জ শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকায় অবস্থিত র্যাব-১১ এর স্কোয়াড কমান্ডার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে ৪৯ জন জঙ্গিকে ধরা হয়েছে। মাদক নিয়েও আমাদের অপারেশন অব্যাহত আছে।’
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিও) এএফএম এহতেশামুল হকের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মো. গুলজার আলী, পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের উপ পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম খা, নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ম্যানেজার ডেপুটি জেনারেল আশরাফুল আলম খান, বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল খালেক, ঢাকা ওয়াসা নারায়ণগঞ্জ মডস এর উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান, গণপূর্ত বিভাগ নারায়ণগঞ্জের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আব্দুল হোসেনসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৩০:৪৩ ৫০১ বার পঠিত