মেডিকেলে মেধাতালিকায় চান্স পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছিলো না দিনাজপুরের তনুশ্রী।’ গতবছর মেডিকেলে ভর্তির সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন একটি পোস্ট দেখে চুপ করে থাকতে পারেননি জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, এমপি। তিনি সরকারি সফরে বিদেশে থাকলেও সেখান থেকে ফিরেই তনুশ্রীর মেডিকেলে ভর্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এমনি ভাবে অনেক দরিদ্র-অসহায় শিক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে সংসদ সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদ থেকে পাওয়া বেতন-ভাতা বাবদ পাওয়া টাকায় তনুশ্রীর মতো ৩৬ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। যারা ডাক্তারী, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন।
এবিষয়ে কথা বলতে রাজী হননি হুইপ ইকবালুর রহিম। তিনি বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করলেও সাফ জানিয়ে দিলেন এগুলো নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। বিষয়টি আমি কাউকে কোনদিন জানায়নি। তিনি বলেন, আমরা পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে এগিয়ে নিতে চাই। যে কারণে অর্থের অভাবে যাতে কোন মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্নভঙ্গ না হয় সেটা দেখা দরকার। তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছি। সরকারের উন্নয়ন কাজই এলাকায় বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। আর সেই চেষ্টার কারণে বদলে যাচ্ছে দিনাজপুর। আগামীতে শিল্প নগরী হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ এক নতুন দিনাজপুরের স্বপ্ন দেখেন তিনি। তিনি সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নানা উদ্যোগও নিয়েছেন।
সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা ইকবালুর রহিম এক অন্যরকম উদাহরণ। কিন্তু এলাকার উন্নয়নে মানুষের কল্যাণে কোথায় অনুরাগ নেই সেটাই বড় প্রশ্ন এখন!! তিনি উন্নয়ন ও অগ্রগতির নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। পাল্টে দিয়েছেন দিনাজপুর সদরের চিত্র। ওই এলাকার শিক্ষা-স্বাস্থ্য-অবকাঠামো, তথ্য-প্রযুক্তি সকল ক্ষেত্রে সকল ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এতিম-প্রতিবন্ধিসহ পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য নিয়েছেন বিশেষ উদ্যোগ। সমাজের পিছিয়ে পড়া তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) জনগোষ্ঠীর কল্যাণে এমন সব কার্যক্রমের জন্য ওয়ার্ল্ড লিডারশিপ ফেডারেশনের পক্ষ থেকে মিডিল ইস্ট-এশিয়া লিডারশিপ সামিট এন্ড এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় হুইপ ইকবালুর রহিমকে। মন্ত্রী পরিষদের পক্ষ থেকেও তাকে আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদ জানানো হয়।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সদর উপজেলার বাঙ্গিবেচা এলাকায় ২০১২ সালে ৫ একর ৫ শতক খাস জমি বরাদ্দ দিয়ে মানবপল্লী নামক আশ্রয়ন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে ১৫ ব্যারাকে ১২৫টি ঘর তৈরি করে বর্তমান সরকার স্বীকৃত তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মানুষদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সারা দেশের কেবলমাত্র এখানেই তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই মানবপল্লীর বাসিন্দাদের কেবলমাত্র বাসস্থান নয়, চাষের জমি, পুকুর, বিভিন্ন ট্রেডে যেমন- সেলাই, মাছ চাষ, বিউটি পার্লার, গরু-ছাগল পালন প্রভৃতি প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। গরু-ছাগল, সেলাই মেশিন, পুকুরে মাছ চাষ কিংবা ব্যবসার জন্য নগদ অর্থও প্রদান করেছেন হুইপ ইকবালুর রহিম। এমনকি তাদের অনেককে আনসার-ভিডিপি’র প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়েছে। তাদেরকে মূল ধারায় সম্পৃক্ত করতে তাদেরকে যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
মানবপল্লীর এক বাসিন্দা বলেন, জন্ম দিলেই বাবা হয়না। হুইপ ইকবালুরকেই আমাদের বাবা মনে করি। তাদের মনোবল এখন কয়েকগুন বেশি। সারাদেশের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা ভিক্ষা করো না। অসৎ কাজ করো না। দেখো আমরা কাজ করে খাচ্ছি। অনেক সম্মানের সাথে আছি। তোমরাও পরিশ্রম করে বাঁচো। আর যদি তোমাদের পরিবার বা কেউ থাকার জায়গা না দেয়, তাহলে আমাদের এখানে এসো। আমরা তোমাদের রাখবো।
‘দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম বারের মতো সফল ব্রেন টিউমার অপারেশন’ এপ্রিল মাসের শুরু দিকে দেশের প্রায় সব গণমাধ্যম বেশ গুরুত্বের সাথেই খবরটি প্রচার করেছে। একটু খোঁজ নিতেই জানা গেলো, দিনাজপুরের স্বয়ংসম্পূর্ণ এই হাসপাতালটি ডাব্লিউএইচও এবং ডিজি হেলথ-এর গবেষণা মতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। আর সাফল্যের পিছনের কারিগর এই এলাকারই জনপ্রতিনিধি হুইপ ইকবালুর রহিম। আধুনিক যন্ত্রপাতি, ল্যাব, সিসিইউ, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, সুদক্ষ চিকিৎসক, নার্স সব কিছুই রয়েছে এখানে। যে কেউ বলবেন, বাহ্ স্বাস্থ্য সেবা প্রদানেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার!!
হুইপ ইকবালুর রহিমের ব্যক্তিক্রমী আরো একটি উদ্যোগ হচ্ছে প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছে ‘শান্তি নিবাস’ নামের বহুতল বিশিষ্ট আধুনিক ভবন। শান্তি নিবাসের প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে ভাতার ব্যবস্থা। শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে ইকবালুর রহিমের এলাকায়। এখানকার ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মসজিদ, মন্দির সাক্ষ্য বহন করছে ধর্মীয় সম্প্রীতিপূর্ণ পরিবেশ। হুইপ ইকবালুর রহিমের সময়পযোগী পদক্ষেপের ফলে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে এই এলাকায়। সড়ক পথ ৬২০ কিলোমিটার, রেলপথ ১৪৭ কিলোমিটার, ৬৫টি ছোট-বড় সেতু তৈরি হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে কৃষি খেতে সেচের জন্য প্রতিষ্ঠিত রাবার ড্যামটি ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিতে সক্ষম।
শিক্ষার আলো ছড়াতে এই এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯৫৫টি, মাদ্রাসা ১৩৪টি এবং ৭৫টি কলেজ রয়েছে। বিজ্ঞান চর্চায়ও পিছিয়ে নেই এখানকার শিক্ষার্থীরা। হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ড. এম ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবনে চলছে ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের গবেষণা কাজ। নারীদের উন্নয়নে লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে এলাকার পিছিয়ে পড়া নারীরা।
হুইপ ইকবালুর রহিম ব্যক্তিগত জীবনে শত ব্যস্ততার মাঝেও একটু অবসর পেলেই জার্সি-কেড্স পরে নেমে পড়েন লনটেনিস কোটে। একইভাবে এলাকার শিশু কিশোরদের খেলাধুলা শরীর চর্চার স্টেডিয়াম, ব্যায়ামাগার, পার্ক ইত্যাদি গড়ে তুলেছেন অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। তিনি বলেন, যুব সমাজকে মাদক কিংবা জঙ্গীবাদের মতো ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষা করতে খেলাধূলা, নির্মল বাতাস খুবই জরুরি।
হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি ঠিক কাজটি ঠিক সময়েই করে থাকেন। দিনাজপুর রাজবাটী সরকারি শিশু পরিবার প্রাঙ্গনে সমাজ সেবা অধিদপ্তর আয়োজিত রংপুর বিভাগীয় সরকারি শিশু পরিবার ও সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের নিবাসীদের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় গত ১৬ এপ্রিল। রংপুর বিভাগের ৮টি জেলার ১১টি প্রতিষ্ঠানের হুইপ ইকবালুর রহিম উপস্থিত হয়ে প্রথমেই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহনকারীদের বিশেষ সহযোগিতা এবং উৎসাহীত করার জন্য পুরস্কার হিসেবে নগদ অর্থ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর অনুষ্ঠান উপভোগ করতে করতে দুপুরের খাবার সময় হয়ে যাচ্ছে এতিম শিশুগুলোর জন্য সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে চাইনিজ খাবারের আয়োজন করেন।
এবিষয়ে আবেগাপ্লুত ইকবালুর রহিম বলেন, ‘ওরা কেউ কোন দিন চাইনিজ খাইনি। ওদের কারো বাবা নেই, অনেকের বাবা-মা দু’জনই নেই। কে ওদের মনের ইচ্ছা পূরণ করবে? আমরা জনপ্রতিনিধিদের নৈতিক দায়িত্ব এদের পাশে দাঁড়ানো। দিনাজপুরের রাজবাটীতেই ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এতিমদের জন্য একটি আধুনিক ভবন তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ভূ-প্রাকৃতিক গঠন অনুসারে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের থেকে বেশ উঁচু দিনাজপুর সদর। ইতিপূর্বে কখনও বন্যা কিবাং জলোচ্ছাসের কবলে পড়তে হয়নি। এমনকি দিনাজপুরে কোন নৌকা খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে গত বছর হঠাৎ পাহাড়ী ঢল আর নদীর বাঁধ ভেঙ্গে শহরে পানি ঢুকে পড়ে। মুহুর্তেই খবর পৌঁছে যায় হুইপ ইকবালুরের কাছে। এক মুহুর্ত দেরি না করেই নদীর বাঁধ মেরামতের জন্য সেনাবাহিনীর স্পেশাল ব্রাঞ্চকে ডেকে পাঠান। নিজে ভাঙ্গন স্থলে উপস্থিত হয়ে কাজের তদারকি করেন। বললেন, প্রায় সব প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের যোগাযোগের নম্বর তার কাছে রয়েছে। নিজেই ফোন করে বলেছেন, শহরে পানি ঢুকছে, ক্লাস বন্ধ করে স্কুল খুলে দেন মানুষের আশ্রয়ের জন্য। শহরের হোটেল মালিকদের ফোন করে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আপাতত হোটেলের অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রেখে বন্যার্তদের জন্য খিচুড়ি রান্না করতে। এসব খিচুড়ি দলীয় নেতা-কর্মীদের দিয়ে সব স্কুলে স্কুলে পৌঁছে দিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব। পাশের জেলা থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ধার করে নিয়ে এসেছেন উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য।
প্রচার বিমুখ অত্যন্ত সুদক্ষ, চৌকষ, দৃঢ়, মানবিক স্বপ্নবাজ নেতৃত্বের অধিকারী ইকবালুর রহিমে নির্বাচনী এলাকাকে ঘিরে আজও রয়েছে ব্যাপক স্বপ্ন। ভবিষ্যতে শিল্প নগরী হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে রোল মডেলে পরিণত করার স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। স্বপ্ন দেখেন নিজের এলাকার পাশাপাশি পুরো বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করতে। আর সেকারণে নিজের বিশেষ উদ্যোগগুলোকে সারাদেশের মানুষের মাঝে জানাতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিশেষ করে ব্যতিক্রমী উদ্যোগগুলো যদি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জন্য অনুকরণীয় হয়ে ওঠে তাহলে সেটাই হবে সার্থকতা। তিনি স্বপ্ন দেখেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার সৈনিক হিসেবে দেশ নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের প্রতিটি অঞ্চল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ফসল, কর্মসংস্থান প্রভৃতিতে হয়ে উঠবে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৪৫:২৩ ৩৮১ বার পঠিত