চমক ছিল দুটি। এক, সেলুলয়েডে সঞ্জয় দত্তের বর্নময় জীবন। দুই, সঞ্জুর চরিত্রে রণবীর কাপুর। কিন্তু ছবি একটু এগোতেই বোঝা গেল দুই নয়! গোটা ছবি জুড়েই একের পর এক রয়েছে চমক। এক কথায় শুরু থেকে শেষ ‘সঞ্জু’ ফুল প্যাকেজ অফ সারপ্রাইজনেস। তবে ভয়ের কিছু নেই, এলেখায় খুলিনি কোনও সারপ্রাইজ। সবই সযত্নে তুলে রাখব সিনেমাহলের জন্য।
আসলে কিছু কিছু ছবি বর্ষার আকাশের মতো। তার সারা গায়ে কখনও কখনও মিশে থাকে মন খারাপের মেঘ। কোথাও আবার শিশু মনের আঁকা ছবির ক্যানভাস। আসলে কোনও কোনও ছবির চরিত্ররা আমাদের চমকে দেয়। বাস্তবের আয়নার সামনে টেনে দাঁড় করিয়ে দেয়। সে ছবিতে যতটা গল্প থাকে, তার থেকে বেশি থেকে যায় না বলা কথা। এমনই এক গল্প সিনেপ্রেমীদের উপহার দিলেন রাজু হিরানি।
বাবার লাডলা থেকে ড্রাক অ্যাডিকটেড সঞ্জু। স্টারলাইফ টু বেগার। ঝাঁ চকচকে রঙিন গ্ল্যাম দুনিয়ায় হয়ে গরাদের পিছনে অন্ধকার বাস্তব। যেখানে সব আশা ক্ষীণ হয়ে যায় সেখান থেকে আলো ফেরা এক বাস্তব রূপ ‘দ্য সঞ্জয় দত্ত’। অভিনেতার আটান্ন বছরের বর্ণময় জীবন কাহিনি দু’ ঘন্টা একচল্লিশ মিনিটের রিলে বন্দি করেছেন পরিচালক। সময় কম। গল্প ভুড়ি ভুড়ি। তারমধ্যে থেকেই পরিচালক হাতড়ে বেছে নিয়েছে ‘সঞ্জু’ স্টোরির গোল্ডেন অ্যান্ড ব্ল্যাক মেমোরি।
‘সঞ্জু’ শুধু সঞ্জয় দত্তের বায়োপিক নয়! বলা ভাল খানিকটা ফেম আর মানির আড়ালে থাকা অজানা অনেক কাহিনি। তাইতো ছবির পরতে পরতে যখন মিস্টার দত্তের বেবরা জীবন কাহিনি খুলেছে, আসলে যেন খুলে যাচ্ছিল বড়লোক বাবা-মায়ের বিগড়ে যাওয়া সন্তানের গল্প। যেখানে একদিনে রয়েছে একাধিক নারী সঙ্গ। অন্যদিকে নেশার আসক্তি। দু’য়ে মিলে একে পর এক বারোটা ছবি ফ্লপ। হিরো থেকে কপালে সেঁটে সন্ত্রাসবাদীর তকমা। সুপারস্টারের হয়ে যায় কয়েদি নম্বর ১৬৬৫৬।
পর্দার সামনের জীবন বনাম ক্যামেরার পিছনের লাইফ। নেশার প্রতি আসক্তি বনাম ড্রাগ অ্যাডিকশন থেকে বেড়িয়ে আসার চেষ্ঠা। সুন্দর স্টারের জীবন বনাম কয়েদির মামুলি জীবন। হেরে যাওয়া বনাম ফিরে আসার নামাবলী গায়ে জড়িয়ে নিয়েছেন সঞ্জয় দত্ত। আসলে সেলুলয়েড পাশাপাশি বাস্তব জীবনের সুপারস্টার সঞ্জু। আর সেই গল্প হাতছাড়া করতে চাননি রাজু হিরানি। যদিও সব কথা বলে ওঠার সময় বা পারমিশন পানননি পরিচালক। কিন্তু যতটা এই সিনেমায় রয়েছে তাই বক্স-অফিস কাঁপাতে যথেষ্ট।
খামতি বলতে, এছবিতে সঞ্জয়ের অসহায় দিকটিই যেন একটু বেশি করে তুলে ধরেছেন পরিচালক। এক হাতে তো তালি কখনও বাজে না। তবুও অনেক ক্ষেত্রে মনে হবে সেই চেষ্ঠাই যেন করছেন পরিচালক। হয়ত বন্ধু বলেই সাত খুন মাফ। তবে হলের মাঝে সিটি আর হাততালির জোয়ারে সে খুঁদ দেখার জো কার! যদিও বন্ধুর নারী সঙ্গ থেকে বাদমেজাজি জীবন সবই ছুঁয়ে গিয়েছেন পরিচালক। তবে তা খুব যত্নের সঙ্গে।
তবে এছবি রণবীরের টার্নিং পয়েন্ট। একের পর এক ফ্লপের রেকর্ডে ‘সঞ্জু’ দিয়ে, যদি রণবীর দু’দিনে একশো কোটির বক্স-অফিসে ঢুকে পড়েন, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বলা যেতেই পারে এতদিনে রণবীরের ফিল্মি জীবনের সেরা বাজিটা ‘সঞ্জু’ দিয়ে খেলেছেন। চলাফেরা থেকে শুরু করে কথা বলার ধরন ডিটো সঞ্জয় দেয়। কিছু কিছু সময় চোখ রগরে আপনাকে বুঝতে হতেই পারে কে আসল আর কে নকল! এবিষয়ে অবশ্যই বাহবা দিতে হবে পরিচালকে। সত্যি জহুরির চোখ হিরানির।
তবে শুধু রণবীর কেন! সঞ্জয়ের মা নার্গিসের চরিত্রে মনীষা কৈরালা আরও একবার নিজেকে চিনিয়ে দিলেন। তিনি যে জাত অভিনেত্রী তা আরও একবার প্রমাণিত। এদিকে বাবার ভূমিকায় পরেশ রাওয়ালের অভিনয় নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এছবিতে তিনি অসাধারণ। এছাড়া অনুষ্কা শর্মা, দিয়া মির্জা, বোমান ইরানি, ভিকি কৌশাল, টাবু নিজ নিজ জায়গায় পারর্ফেক্ট। ছবির মিউজিক নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। যে ছবির সংগীতের হেঁশেল সামলায় এ আর রহমান, রোহান রোহন ও বিক্রম মান্ত্রোস-মতো শিল্পীরা সেখানে তো জাদু হবেই।
সব শেষে একটা কথা বলার অনেক কথা হয়ত এছবিতে ধরা হয়নি। কিন্তু তা মিলিছে তাই কম কী। আর টক-ঝাল মিষ্টি এছবিতে এন্টারটেইনেমন্টের রশদ হয়েছে সবই। তাই বৃষ্টির মরশুমে কপি আর পপকনের সঙ্গে এই উইকেন্ডে ‘সঞ্জু’ চললে মন্দ কী!
বাংলাদেশ সময়: ২২:০৩:৩২ ৩৬৮ বার পঠিত
