বন্দর উপজেলার সোনাকান্দা নামক স্থানে ঐতিহাসিক সোনাকান্দা দুর্গ অবস্থিত। সোনাকান্দা দুর্গটি বাংলার বার ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁ তৎকালীন সময়ে ব্যবহার করতেন। বাংলার সুবেদার ও সেনাপতি মীর জুমলা ১৭ শতকের মধ্যভাগে এই দুর্গটি নির্মান করেন। বর্তমানে দুর্গটি বাংলাদেশ প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে সংরক্ষিত। এ দূর্গটি দেখে আসতে পারেন প্রায় ৪‘শ বছর পুরনো জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে নির্মিত এই দূগের্র কিছু ঐতিহাসিক প্রতিচ্ছবি। যেখানে গেলে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন কল্পনার এক জগতে। যার স্থাপত্য কালের গল্প শুনতে শুনতে নিজেই হয়ত লুকিয়ে যেতে পারেন দূগের্র কোন এক দেয়ালের কোণে। মনে হতে পারে এই বুঝি আপনার উপর জলদস্যুদের আক্রমন। এই কল্পনার জগতে যেতে খুববেশি ঝামেলা পোহাতে হবেনা আপনাকে। খুব সহজেই যাওয়া যায় নারায়ণগঞ্জ খেয়া ঘাট (টার্মিনাল) থেকে নৌকায় করে মাত্র ২টাকায় শীতলক্ষ্যা নদী পাড় হবেন। এছাড়াও ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে করে ফ্রিতেই পাড় হতে পারবেন । নৌকা পাড় হলেই দেখবেন সেখানে রিক্সা, ইজিবাইক ও সিএনজি রাখা আছে আপনাকে সেখানে নেওয়ার জন্য। যেকোন একটায় করে চলে যেতে পারেন সোনাকান্দা দুর্গে। সিএনজি ও ইজিবাইক আপনার কাছ থেকে নিবে মাত্র ১০ টাকা এবং রিকশায় করে গেলে ভাড়া নিবে ২৫ টাকা। আর ঢাকা থেকে যারা আসবেন তারা ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট অথবা একটু দক্ষিণে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ঠিক উঠার পথে বন্ধন, আনন্দ, উৎসব বাসের টিকেট কাউন্টার রয়েছে যাতে চড়ে ৪০ মিনিটেই সরাসরি চলে আসতে পারবেন নারায়ণগঞ্জ খেয়া ঘাট (টার্মিনাল)। ভাড়া নিবে মাত্র ৩৬ টাকা। দুগের্র স্থাপত্যকাল ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়। মূলত জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে ইদ্রাকপুর, সোনাকান্দা ও হাজীগঞ্জথ এই তিনটি দুর্গ নির্মাণ করেছেন বাংলার সুবেদার মীর জুমলা। সুলতান মীর জুমলা ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদীতে জলদস্যুদের নিধন করার জন্য শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরবর্তী সোনাকান্দা এলাকায় এ দূর্গটি স্থাপন করেন। জনশ্রুতি আছে এ দুর্গ থেকে পাতাল পথে হাজীগঞ্জ দুগের্র সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ইটের তৈরি এ দুগের্র দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৩ মিটার, প্রস্থ ৫৮ মিটার। দুর্গটি মোগল স্থাপত্য রীতিতে তৈরি। এর উত্তর দিকে রয়েছে একটি প্রবেশ তোরণ। এটি চওড়া পাঁচ মিটার। দুগের্র দেয়ালের পুরু দেড় মিটার। আর দেয়ালের উচ্চতা সাড়ে তিন মিটার হলেও বর্তমানে উচ্চতা অনেকখানি কমে গেছে। দুগের্র পশ্চিমাংশে রয়েছে সিঁড়িযুক্ত খিলান পথ ও উঁচু বেদি। সেখান থেকে নদীর দিকে মুখ করে কামান বসানো থাকত।
উল্লেখ্য, এ অঞ্চলের তিনটি জলদুগের্র মধ্যে সোনাকান্দা দুর্গটি সর্ববৃহৎ। সোনাকান্দা দুগের্র একটু ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা অন্য দুটি দুগের্র মধ্যে নেই। এ দুর্গটি দুটি অংশে বিভক্ত। একটি হলো বুরুজ বিশিষ্ট আয়তকার ফোকরযুক্ত অংশ আর অন্যটি পশ্চিম দিকে সিঁড়িপথ খিলানযুক্ত উঁচু বেদি। অন্য দুটিতে এমন খিলানসহ প্রবেশপথ নেই। সোনাকান্দা দুর্গের প্রতিরক্ষা প্রাচীরের চূড়ায় মার্লন নকশা এবং বুরুজ রয়েছে। উঁচু প্রাচীর থেকে বন্দুকের গুলি ও কামানের গোলা ছোড়ার জন্য নির্মিত ফোকরও রয়েছে, যা সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য জানান দেয়। সোনাকান্দা ও হাজীগঞ্জ দুর্গ দুটি ১৯৫০ সালে জাতীয় প্রতত্ত্ব বিভাগের আওতায় নিয়ে সংস্কার করা হয়। দুগের্র নামানুসারে ওই এলাকার নামকরণ করা হয় সোনাকান্দা। সোনাকান্দা নামের চমৎকার একটি জনশ্রুতি রয়েছে, বার ভূঁইয়াদের অধিপতি ঈশা খাঁ বিক্রমপুরের জমিদার কেদার রায়ের বিধবা কন্যা সোনাবিবিকে জোরপূর্বক বিয়ে করে এই দুর্গে নিয়ে আসেন। বিষয়টা মেনে নিতে পারেননি সোনাবিবি। তিনি নীরবে নিভৃতে দুর্গে বসে রাত-দিন কাঁদতে থাকেন। সেই থেকে দুগের্র নামকরণ হয় সোনাকান্দা।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০৬:১৭ ৫৬৭ বার পঠিত