দেশে ক্রমবর্ধমান মাংসের চাহিদা মেটাতে পোল্ট্রি শিল্পের পাশাপাশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে টার্কি মুরগীর পালন। টার্কি পালনে খরচ কম হওয়ায় এবং অল্প সময়ে অধিক লাভের পাশাপাশি টার্কি বিদেশেও রফতানি করা যায়। পোল্ট্রি শিল্পের বিকল্প হিসেবে টার্কি শিল্পের দিকেই ঝুঁকছেন নোয়াখালী অঞ্চলের খামারিরা। তবে টার্কি পালনে সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা না থাকা ও মাঠ পর্যায়ে প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারনেই বাধার মুখে পড়ছে সম্ভাবনাময় এ নতুন শিল্পটি।
সরেজিমনে নোয়াখালীর সেনবাগের অর্জূনতলা ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে কামাল ভূঁইয়ার টার্কি মুরগীর খামারটি। তিনি জানান, ২০১৬ সালে বিদেশে থেকে দেশে এসে নিজ পৈত্রিক ৪৭ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তোলেন টার্কি মুরগীর খামার কিং এগ্রো গ্রুপ। প্রথমে ২০০ টার্কি মুরগীর বাচ্চা দিয়ে খামার শুরু করেন। কিন্তু টার্কি মুরগী পালনে অভিজ্ঞতা না থাকায় শুরুতেই অনেক ঝুঁকি ও ঝামেলা পোহাতে হয়েছে এমনকি লোকসানও গুনতে হয়েছে। সে সময় অনেক টার্কির বাচ্চা মারা যায়। কিন্তু তাতে তিনি হতাশ হননি। আবার বিদেশ থেকে টার্কি বাচ্চা সংগ্রহ করে আনেন। বর্তমান তার এ খামারে ছোট বড় মিলে প্রায় দুই হাজার টার্কি মুরগী ও বাচ্চা রয়েছে। নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তিনি খামারটি সফলভাবে পরিচালনা করছেন। টার্কি মুরগী পালনের পাশাপাশি ডিম থেকে মেশিন দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে বাজারজাত করছেন। তিনি আরও জানান, খরচ কম হওয়ায় এ খামার থেকে প্রতিমাসে খরচ বাদ দিয়ে তিনি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করছেন।
কামাল ভূঁইয়ার জানান, টার্কির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। সামান্য ভ্যাকিসন দিলে এর রোগ চলে যায়। এছাড়া টার্কি ঘাস ও লতা পাতা খাওয়ার কারণে খাবারের জন্য বাড়তি তেমন কোনো খরচ হয় না। খরচ অনুপাতে লাভ বেশি।
এদিকে কামাল ভুইয়ার টার্কি খামারে সফলতার খবরটি এলাকায় বেশ সাড়া পড়েছে। বিশেষ করে খামারে বয়লার ও লেয়ার মুরগি পালন করতে উৎপাদন খরচ মেটাতেই অনেকে লোকসানে পড়ে বন্ধ করে দেয়া খামার মালিকরা নতুন সম্ভাবনাময় এ টার্কি খামারের দিকে ঝুঁকছেন। অল্প খরচে র্টাকি খামার থেকে লাভবান হওয়ার দেখাদেখি টার্কি মুরগীর পালন নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে এ অঞ্চলের মানুষের মনে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক বেকার শিক্ষিত যুবকরা এসে এ খামার দেখছেন এবং এখান থেকে টার্কি মুরগী বাচ্চা নিয়ে নিজ এলাকায় খামার গড়ে তোলছেন। অনেকে লাভেরও মুখ দেখেছেন।
তবে সম্ভাবনায় এ শিল্পটি নতুন হওয়ায় এখনও এলাকার অনেকে কাজে পুরোপুরি বিষয়টি অজানা। তাই অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ার এ সম্ভাবনা খাতটি আরও বৃদ্ধি করণের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ ও খামার স্থাপনে নতুন উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করার দাবি এলাকাবাসীর।
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. জাকির হোসেন জানান, টার্কি পালন নতুন একটি শিল্প হলেও দিন দিন এর প্রতি খামারিদের আগ্রহ বাড়ছে। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে টার্কির মাংশ বিদেশে রফতানি করে বৈদেশীক মুদ্রা আয় করে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব। তিনি আরো জানান, জেলায় মাত্র ১৬টি টার্কি খামার গড়ে উঠলেও সেনবাগে উপজেলায় রয়েছে ১২টি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৪৫:৪০ ৩২২ বার পঠিত