রাঙামাটি রাজবন বিহারে ৪৪ তম কঠিন চীরদান শেষ হয়েছে। তুলা থেকে সুঁতা কাটাসহ কোমর তাঁতের মাধ্যমে বুনন প্রক্রিয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি কঠিন চীবর শুক্রবার বুদ্ধ ভিক্ষু সংঘের উদ্দেশ্য দান করেছেন পুণ্যার্থীরা।
শুক্রবার দুপুর ২টায় রাজবন বিহারের পশ্চিম পার্শ্বে মাঠে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি কঠিন চীবরটি রাজবন বিহার অধ্যক্ষ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরের হাতে তুলে দেন রাজবন বিহারের পৃষ্ঠপোষক চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। এ সময় হাজার হাজার পুণ্যার্থীর সাধুবাদে মুখরিত হয় রাজবন বিহার এলাকা।
এর আগে রাজবন বিহার এলাকায় কঠিন চীবর প্রদক্ষিণ করানো হয়। এ সময় পুণ্যার্থীরা চীবরে বিভিন্ন দানীয় সামগ্রী দান করেন। চীবর প্রদক্ষিণ শেষে ভিক্ষুসংঘের কাছ থেকে পঞ্চশীল গ্রহণ করেন পুণ্যার্থীরা। পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন দেবাশীষ রায়। পঞ্চশীল প্রদান করেন ভদন্ত প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।
এর আগে কঠিন চীবর দানকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অর্ধ লক্ষাধিক পুণ্যার্থী কল্পতরু, চীবরসহ বিভিন্ন দানীয় সামগ্রী নিয়ে বন বিহারে হাজির হয়।
চীবর দান অনুষ্ঠানে রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা, জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিউল সারোয়ার, মো. জাহাঙ্গীর, সেনা সদর জোন কমান্ডার রেদুয়ানুল, জেলা পরিষদের সদস্য সুবীর কুমার চাকমা, সাবেক রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, বিএনপি কেন্দ্রীয় সহ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক দীপেন দেওয়াসহ জেলার শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিসহ বিদেশি অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
ধর্মসভার শুরুর আগে বক্তব্য দেন দেবাশীষ রায়, বন বিহারের উপাসক উপাসিকা পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি গৌতম দেওয়ান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা। দেশ ও বিশ্বশান্তি প্রার্থনা করেন বন বিহারের উপাসক উপাসিকা পরিষদের সহসভাপতি নিরূপা দেওয়ান। বুদ্ধ ভিক্ষুদের ধর্ম দেশনা শেষে হাজার হাজার পুণ্যার্থীর সাধুবাদের মধ্যে দিয়ে দুই দিনব্যাপী ধর্মানুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
তথাগত গৌতম বুদ্ধের সময় বিশাখা নামে এক পুণ্যবতী কর্তৃক প্রবর্তিত রীতি অনুযায়ী দুই দিনব্যাপী এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৪ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশাখা প্রবর্তিত রীতি অনুযায়ী কঠিন চীবর দান হয়ে আসছে। বুদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাস বর্ষাব্রত শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার দিন থেকে এ কঠিন চীবর দানুষ্ঠান শুরু হয়। মাসব্যাপী কঠিন চীবর দান করা যায়। বছরে একটি বিহারে একবারই করা এ দান। সে দান করতে হয় প্রবারণা পুর্ণিমা (আশ্বিনী পুর্ণিমা)- কার্তিক পূর্ণিমা দিন পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৪৬:৪৮ ৩৮৭ বার পঠিত