ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত সঠিক : সালমান এফ রহমান

প্রথম পাতা » ছবি গ্যালারী » ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত সঠিক : সালমান এফ রহমান
বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪



ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত সঠিক : সালমান এফ রহমান

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, বিশ্ববাজারে ডলার আরও শক্তিশালী হওয়ার কারণে টাকার অবমূল্যায়ন করতে হচ্ছে, যদিও টাকার মান দীর্ঘদিন স্থিতিশীল ছিল। সেই বাস্তবতা এখন আর নেই। সে জন্য কেন্দ্রিয় ব্যাংক গতকাল টাকার বিনিময় হার ও সুদহার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি মনে করেন, ডলারের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নীতির কারণে কিন্তু আমাদের আমদানির উপর প্রভাব পড়বে না। কারণ আমদানি যেটা হচ্ছিল, সেটা উচ্চ মূল্যেই হচ্ছিল। তবে রপ্তানি যেহেতু বাড়বে, রপ্তানির উপর প্রভাব ইতিবাচকই হবে। পাশাপাশি রেমিটেন্সের উপরও এই প্রভাব পড়বে। ফলে রিজার্ভের উপর বিদ্যমান চাপ কমে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ২৯তম ইউএস ট্রেড শো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময় হার সমন্বয়ের জন্য গতকাল ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করে এবং সেই অনুযায়ী, কেন্দ্রিয় ব্যাংক ডলারের বিনিময় মূল্যমান ১১৭ টাকা নির্ধারনের অনুমোদন দেয়।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে তিন দিনব্যাপী এই ট্রেড শো শুরু হয়েছে। আগামী ১১ মে পর্যন্ত এই প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এবারের ট্রেড শোতে অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪টি প্রতিষ্ঠান। ঢাকায় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে অ্যামচেম ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস।
নীতি সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, অনেক দিন ধরে বলা হচ্ছিল সুদহার বাড়বে। এতে ব্যবসায়ীদের উপর চাপ পড়বে। কিন্তু এটা করা হয়েছে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য। এর ফলে মূল্যস্ফীতি যদি না কমে, তাহলে এই সিদ্ধান্ত আবার পুন:বিবেচনা করতে হবে।
সালমান এফ রহমান দেশের করব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে আরও বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত বিশ্বে সবচেয়ে নিচের সারিতে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও যা সবচেয়ে কম। গত বছরের তুলনায় এ বছরে তা আরও কমেছে। এই প্রবণতা উল্টে দিতে হবে। তা না হলে, অর্থনীতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতি হলো, যাঁরা কর দেন, তাঁদের উপর করের চাপ আরও বৃদ্ধি করা। কিন্তু যাঁরা করজালের বাইরে, তাঁরা স্বাধীন। এটা উল্টে দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, রাজস্ব আয় বাড়ানোর এটাই একমাত্র পথ। তিনি আশা করেন, এবারের বাজেটে এ বিষয়ে বাস্তব কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই কাজে ডিজিটাইজেশন গতি আনতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। দেশে প্রতিভাবান তরুণ কর্মী আছেন। তবে তিনি বলেন, দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে মূল শক্তিগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বাজারের সম্প্রসারণশীলতা ও সর্বোপরি ব্যবসাবান্ধব নীতি। এ ছাড়া নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে বলেও জানান তিনি। মার্কিন বিনিয়োগকারিদের বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর আহবান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সফটওয়্যার উন্নয়ন এবং ফ্রিল্যান্স পরিষেবাগুলোর জন্য একটি বিশিষ্ট আউটসোর্সিং গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি সফটওয়্যার রপ্তানির প্রাথমিক বাজার হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশী আইটি কোম্পানির সাফল্য তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন,বাংলাদেশ অনলাইনে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বা ই-িজিপি পদ্ধতি সফলভাবে চালু করেছে। দোহাটেক নিউ মিডিয়া লিমিটেড নামে যে কোম্পানি এই সফটওয়্যার উদ্ভাবন করেছে তাঁরা মালদ্বীপ, ভুটানসহ অন্যান্য দেশে ই-জিপি নিয়ে কাজ করছে। এটি বাংলাদেশী আইটি কোম্পানির জন্য বড় সাফল্য। বাংলাদেশী এসব কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের আইটি কোম্পানিসমূহ এগিয়ে আসতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এফডিআই বা প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের একক বৃহত্তম উৎস। এ দেশে চার বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলার মার্কিন বিনিয়োগ আছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্য ও সেবা রপ্তানির একক বৃহত্তম গন্তব্য। বাংলাদেশে যত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, তার অর্ধেক উৎপাদনের পেছনে মার্কিন বিনিয়োগ আছে। বিদ্যুতের বড় একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত টারবাইন দিয়ে উৎপাদিত হয়।
পিটার হাস বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, সেটাই দেশটির জাতীয় বিজ্ঞাপনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র, কিন্তু চ্যালেঞ্জ আছে। মার্কিন বিনিয়োগকারীরা সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠিক করেন না যে, তাঁরা বাংলাদেশ বিনিয়োগ করবেন। বরং তাঁরা ভাবেন, কোথায় সবচেয়ে কম ঝুঁকিতে ব্যবসা করে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে। তাঁরা সব সময় অনেক বিষয় খতিয়ে দেখেন, কোথায় ব্যবসা করা যায়। ফলে অন্য অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এখানে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। সেই প্রতিযোগিতায় ভালো করতে হলে, ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে হবে।
পিটার হাসের একথার পরিপ্রেক্ষিতে সালমান এফ রহমান বলেন, ২০০৯ সালের পর শুধু বাংলাদেশের অর্থনীতি নয়, সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশও বদলে গেছে। সে জন্য বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য। বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে বলে পিটার হাস যে মন্তব্য করেছেন, তার সঙ্গে তিনি একমত। সালমান এফ রহমান বাংলাদেশ ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নের চেষ্টা করছে বলে জানিয়ে বলেন, এটা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সবকিছু ডিজিটাইজ করা অর্থাৎ অনলাইনে সেবা দেওয়া। বাংলাদেশ এ নিয়ে কাজ করছে। বেশ কিছু সেবা ডিজিটাইজ করা হয়েছে, যদিও তা পূর্ণাঙ্গ হয়নি। কাগজে-কলমেও অনেক কিছু করতে হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রণিধানযোগ্য উন্নতি করেছে বলে মন্তব্য করেন সালমান এফ রহমান, যেমন ভূমি নিবন্ধন। এসময়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘কোভিডের সময় এই ডিজিটাল সেবার কল্যাণেই সরকারি কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়েছে এবং তখনো আমরা ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি।’ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব অর্থনীতিতে অনুভূত হয়েছে বলে জানান সালমান এফ রহমান। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার বৃদ্ধি করায় ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে। রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছে।
মেলায় মেটলাইফ, মাস্টারকার্ড, এক্সন মবিল, শেভরন করপোরেশন, ফোলিয়া ওয়াটারের মতো প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। ১৯৯২ সাল থেকে শুরু হয় এই ট্রেড শো। ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক বাণিজ্য প্রায় এক হাজার কোটি ডলারের। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ১৯ শতাংশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।

বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৭:১৮   ১৪০ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ছবি গ্যালারী’র আরও খবর


গণমানুষের প্রতিবাদের মুখে, ঢাকা–নারায়ণগঞ্জ রুটে বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার
ইতিহাসের এই দিনে
আজকের রাশিফল
আল কোরআন ও আল হাদিস
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিয়ে কালো টাকা ছড়ানোর পথ বন্ধ করতে হবে
নতুন প্রযুক্তির ক্যাবলের চাহিদা বাড়বে : ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
জুলাই-আগস্টের শহীদরা আমাদেরকে গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন : মির্জা ফখরুল
সেতু কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল: ফাওজুল কবির খান
গণতন্ত্র উত্তরণে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে : তারেক রহমান
সাগর-রুনির সন্তান মেঘের হাতে পূর্বাচলের প্লটের দলিল হস্তান্তর করলেন প্রধান উপদেষ্টা

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ