গাজা যুদ্ধবিরতির জন্য জিম্মি মুক্তির দাবি ইসরাইলের

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » গাজা যুদ্ধবিরতির জন্য জিম্মি মুক্তির দাবি ইসরাইলের
মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫



গাজা যুদ্ধবিরতির জন্য জিম্মি মুক্তির দাবি ইসরাইলের

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস সোমবার জানিয়েছে, গাজায় আটক অবশিষ্ট জিম্মির অর্ধেকের মুক্তি দেওয়া হলে ইসরাইল ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন এটি সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের কবলে। গাজা সিটি থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

হামাসের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, ইসরাইল গাজা যুদ্ধের অবসান নিশ্চিত করার জন্য ফিলিস্তিনিদের নিরস্ত্রীকরণেরও দাবি করেছে। তবে কর্মকর্তা বলেছেন, নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাব একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে।

কর্মকর্তা এবং মিশরীয় মধ্যস্থতাকারীরা জানান, একটি ইসরাইলি প্রস্তাব পাস করেছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে ‘চুক্তির প্রথম সপ্তাহে অর্ধেক জিম্মির মুক্তি দেওয়া হলে কমপক্ষে ৪৫ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি বাড়ানো হবে ও সাহায্য প্রবেশ করবে।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাস হামলা চালিয়ে ২৫১ জনকে জিম্মি করে। ওই হামলা যুদ্ধের সূত্রপাত করে।

গাজায় এখনও প্রায় ৫৮ জন বন্দী রয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী যার ৩৪ জন মৃত বলে দাবি করে।

কর্মকর্তা আরো বলেন, হামাস নেতারা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পর্যালোচনা করেন। তবে অস্ত্র প্রতিরোধের বিষয়টি একটি লাল রেখা ও আলোচনার অযোগ্য বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, হামাসের আলোচকরা কাতারে যাচ্ছেন, যেখানে তাদের একটি অফিস রয়েছে এবং ইসরাইলের সাথে মূল মধ্যস্থতাকারী আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। হামাসের বিবৃতির বিষয়ে ইসরাইল তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

জাতিসংঘ বলছে, চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ, জ্বালানি, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি রয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৮ মাসের মধ্যে মানবিক পরিস্থিতি এখন সবচেয়ে খারাপ।’

এর আগে, কয়েক সপ্তাহ ধরে এই অঞ্চলে কোনও সাহায্য প্রবেশ না করায় পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে এবং গাজার মানবিক সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে।

কর্মকর্তা বলেন, হামাস মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছে, তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা উপত্যকা থেকে সম্পূর্ণ ইসরাইলি প্রত্যাহার ও সাহায্য প্রবেশের অন্তর্ভুক্ত যেকোনো প্রস্তাবে সম্মত হতে ইচ্ছুক।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় যুদ্ধরত ইসরাইল যুদ্ধ বিরতির পরবর্তী ধাপ নিয়ে মতবিরোধের মধ্যে দিয়ে দুই মাস ধরে চলা বিরতি ভেঙে যাওয়ার পর মার্চ মাসে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে পুনরায় অভিযান শুরু করে।

যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার আগে, ২ মার্চ থেকে ইসরাইল মানবিক সাহায্য বন্ধ করে দেয় এবং লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে।

ওসিএইচএ জানিয়েছে, সাহায্য কর্মীদের ‘অবশিষ্ট মজুদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করার জন্য রেশনিং ও সরবরাহ কমাতে’ বাধ্য করা হয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরের নাসের হাসপাতালের একজন চিকিৎসক আহমেদ আল-ফারাহ বলেন, ‘সবকিছুর ঘাটতি’ থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা দল অবিরাম কাজ করছে।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ গাজায় ‘জরুরি’ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।

ফিলিস্তিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, এক ফোনালাপে ম্যাখোঁ ও আব্বাস ‘যুদ্ধবিরতির জরুরি প্রয়োজনীয়তা, মানবিক সহায়তা সরবরাহ ত্বরান্বিত করা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের তাদের ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুতি প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে জোর দিয়েছেন।’

ম্যাখোঁ এক্স-এ বলেছেন, জিম্মিদের মুক্ত করতে ও লড়াই বন্ধ করতে ‘ফ্রান্স সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।’ তিনি হামাসবিহীন যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা পরিচালনার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ‘সংস্কার’ করার পক্ষেও কথা বলেছেন।

হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাহের আল-নুনু ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ‘গুরুতর বন্দী বিনিময়ের’ শর্তে ইসরাইল যুদ্ধের অবসান ঘটানোর নিশ্চয়তা দিলে হামাস সকল জিম্মিকে মুক্তি দিতে ইচ্ছুক। ‘ দখলদার বাহিনী তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে নুনু বলেন, ‘বন্দীর সংখ্যা কোনো বিষয় নয়।’ তবে মিশরীয় ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সাথে আলোচনার পর তিনি জোর দিয়ে বলেন, হামাস তাদের অস্ত্র ত্যাগ করবে না।

ইসরাইলি সংবাদ ওয়েবসাইট ওয়াইনেট জানিয়েছে, নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের আওতায়, ইসরাইল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেওয়ার মার্কিন গ্যারান্টির বিনিময়ে হামাস ১০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেবে।

১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রথম যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার আগে একাধিক জিম্মি-বন্দী বিনিময় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ইসরাইল প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করে। অন্যদিকে হামাস সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রূপরেখা অনুসারে চুক্তির অধীনে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ওপর জোর দেয়।

তবে ম্যাখোঁ ঘোষণা করেছেন, ফ্রান্স কয়েক মাসের মধ্যে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে। তিনি সোমবার আশা প্রকাশ করেন যে, ফরাসি স্বীকৃতি অন্যান্য দেশকেও অনুসরণ করতে ‘উদ্দীপনা’ দেবে। তিনি বলেন, দেশগুলো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় না তাদেরও তা দেওয়া উচিত।

ইসরাইল ম্যাখোঁর ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেছে। ইসরাইল জোর দিয়ে বলেছে, স্বীকৃতির পদক্ষেপগুলো অসময়ের।

নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের ভূমির কেন্দ্রস্থলে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র যেটির একমাত্র আকাঙ্ক্ষা হল ইসরাইলের ধ্বংস। সেটির ধারণা প্রচার করে প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ মারাত্মক ভুল করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮:০৫:১২   ১১৪ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে ইউরোপের আরও এক দেশ
মালদ্বীপে কনস্যুলার সেবা পেলেন প্রায় দু’হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি
নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রীরও পদত্যাগ চায় জেন-জি, ফের বিক্ষোভ
বিক্ষোভে হওয়া সহিংসতাকে অপরাধ বললেন সুশীলা কার্কি, তদন্তের ঘোষণা
ইসহাক দারকে রুবিও’র ফোন, পাক-মার্কিন সম্পর্ক জোরদারের প্রতিশ্রুতি
কায়রোয় হামাস নেতাদের হত্যার চক্রান্ত করছে ইসরাইল: মিশর
রাশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
ভেঙে দেয়া হলো নেপালের পার্লামেন্ট, মার্চে নির্বাচন
ইসরাইলের নাম না নিয়ে কাতারে হামলার নিন্দা জানালো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ
ইসরাইলের ‘চরমপন্থি মন্ত্রীদের’ শাস্তি দেয়ার ঘোষণা ইউরোপীয় কমিশন প্রেসিডেন্টের

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ