
চার দফা দাবিতে আগামী ২৩ মে বাদ জুমা সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
শনিবার (৩ মে) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন সংগঠনের মহাসচিব সাজেদুর রহমান।
বক্তব্যের শুরুতে ৫ মে ২০১৩ সালে শাপলার গণহত্যাসহ জুলাই বিপ্লবের ৮৪ জন মাদরাসাছাত্র ও শিক্ষকসহ সব শহীদকে স্মরণ করে তাদের মাগফিরাত কামনা করেন তিনি এবং শহীদ পরিবারদের প্রতি জানান শ্রদ্ধ সালাম। আহতদের জন্য দোয়া ও সমবেদনা জানান তিনি।
সাজেদুর রহমান বলেন, দেশের চলমান ক্রান্তিকালে কিছু জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমরা আজকের এই মহাসমাবেশে হাজির হয়েছি। এই মহাসমাবেশ থেকে হেফাজতের ঘোষণা পেশ করছি।
১. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও তাদের কোরআনবিরোধী প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিলপূর্বক আলেম-ওলামার পরামর্শক্রমে ধর্মপ্রাণ বৃহত্তর নারীসমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। নারীর সামাজিক উন্নয়নে পশ্চিমা মূল্যবোধ নয়, বরং আমাদের নিজস্ব সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আলোকেই বাস্তবমুখী সংস্কারের দিকে যেতে হবে।
২. সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করতে হবে এবং ধর্মপ্রাণ গণমানুষের ঈমান-আমল রক্ষার্থে ‘বহুত্ববাদী’ নামক আত্মঘাতী ধারণা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। এছাড়া ‘লিঙ্গ পরিচয়’, ‘লিঙ্গ বৈচিত্র্য’, ‘লিঙ্গ সমতা’, ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ (বা থার্ড জেন্ডার), ‘অন্যান্য লিঙ্গ’ ইত্যাদি শব্দের মারপ্যাঁচে, ‘কাউকে বাদ দিয়ে নয়’ এমন ধোঁয়াশাপূর্ণ স্লোগানের অন্তরালে এবং অসংজ্ঞায়িত ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ (ইনক্লুসিভ) ইত্যাদি শব্দের আড়ালে এলজিবিটি ও ট্রান্সজেন্ডারবাদের স্বীকৃতি ও অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সমাজবিধ্বংসী ও ধর্মবিরুদ্ধ সমকামী-বান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠার পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে।
৩. শাপলা ও জুলাই গণহত্যার বিচারে গতি আনতে ট্রাইব্যুনালের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগেই ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার চিহ্নিত দোসরদের বিচার সম্পন্ন করতে হবে।
৪. গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা পূর্বক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দলটির বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সব ধরনের কার্যক্রম ও তৎপরতা নিষিদ্ধ করতে হবে।
৫. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর নামে কটূক্তি ও বিষোদগার বন্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির আইন করতে হবে। এছাড়া গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননার শান্তি সংক্রান্ত আইনি ধারাগুলো বাতিলের সুপারিশ বাদ দিতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
৬. চট্টগ্রামে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার উসকানিদাতা চিন্ময় দাসের জামিন প্রত্যাহারপূর্বক তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে।
৭. ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে সারা দেশে প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদরাসা শিক্ষার্থী ও ইসলামমনা তরুণদের বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যা ও বানোয়াট মামলাগুলো অতিসত্বর প্রত্যাহার বা নিষ্পত্তি করতে হবে গণ-অভ্যুত্থানের সরকারকে। সেইসাথে ‘জঙ্গি নাটক’ বা ‘জঙ্গি কার্ড’ খেলে বাংলাদেশের ইসলামপন্থী ও আলেম-ওলামার ওপর যারা গত ১৫ বছর নির্যাতন ও গুম-খুন চালিয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৮. গাজার মুসলমানদের ওপর অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের চলমান গণহত্যা ও ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের গণ-অভ্যুত্থানের সরকারকে কূটনৈতিকভাবে আরও উচ্চকণ্ঠ হতে হবে এবং দেশের সর্বস্তরে জনতাকে ইসরাইলি ও ভারতীয় পণ্য বয়কট করতে হবে।
৯. শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১০. রাখাইনকে ‘মানবিক করিডর’ প্রদানে সরকারের সম্মত হওয়া সম্পূর্ণরূপে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আমাদের ভৌগোলিক নিরাপত্তার স্বার্থে এ অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে ফিরে আসতে হবে।
১১. চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে ভিনদেশি মিশনারীদের অপতৎপরতা ও দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সেখানে নিরাপত্তা সংকট কমাতে আলেমসমাজের দাওয়াতি কার্যক্রমকে আরও নিরাপদ ও সুযোগ করে দিতে হবে। সেখানে সামরিক নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও বৃদ্ধি করা ছাড়াও পাহাড়ি বাঙালি ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমঝোতা ও স্থিতি নির্মাণে রাষ্ট্রীয় তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে।
১২. কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং সাধারণ মুসলমানদের ঈমান-আকিদা রক্ষার্থে এদের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।
কর্মসূচি:
১. নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামী ৩ মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলন করা হবে।
২. আগামী ২৩ মে ২০২৪, বাদ জুমা চার দফা দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫৩:৫৪ ১০ বার পঠিত