
জামালপুর প্রতিনিধি: জামালপুরের সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে দুর্নীতির দায়ে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত হওয়া ওয়াজেদা পারভীনকে আপিল অ্যান্ড আরবিট্রেশন বোর্ডে বিচারাধীন একটি মামলা উপেক্ষা করে পুনর্বহাল করেছে বিদ্যালয়ের নবগঠিত অ্যাডহক কমিটি।
গতকাল রবিবার (২২ জুন, ২০২৫) এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের অভিযোগকারী সাবেক শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য বিকাশ চন্দ্র সাহা লিটন, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীন এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান সামাদ। প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীনকে পুনর্বহাল করায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিদ্যালয়ের অভিযোগকারী সাবেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিযুক্ত শিক্ষক সূত্রে জানা যায়, সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) মোস্তাফিজুর রহমান ও শিক্ষার্থীবৃন্দ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ লিখিতভাবে গত ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) নিকট দাখিল করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ব্যাংক রশিদের মাধ্যমে আদায়কৃত অর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে জমা করে আত্মসাৎ করেছেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীনের বিরুদ্ধে দফায় দফায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিলসহ কর্মসূচি পালন করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে ইউএনও’র নিকট অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দাবিতেও শিক্ষার্থীরা ইউএনও’র কার্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রাখে।
এই অভিযোগের আলোকে গত ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাসহ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীনের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ওয়াজেদা পারভীন সাত কার্যদিবসের মধ্যে তার জবাব দাখিল করেন। দাখিলকৃত নোটিশের জবাব পর্যালোচনা করে সন্তোষজনক না হওয়ায় এবং তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ২০২৫ সালের ৪ নভেম্বর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার স্বাক্ষরিত পত্রে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এরপর চলতি বছরের ২ জানুয়ারি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরুণ কৃষ্ণ পাল তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করে ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আপিল অ্যান্ড আরবিট্রেশন বোর্ডে একটি মোকদ্দমা দায়ের করেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। আপিল বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও পুনর্বহাল আপিল অ্যান্ড আরবিট্রেশন বোর্ডে মামলা বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীন এবং বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য বিকাশ চন্দ্র সাহা লিটন নিশ্চিত করেছেন যে, চলতি মাসের গত ১৫ জুন ম্যানেজিং কমিটির সভায় তাকে পুনর্বহাল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের আলোকে গতকাল রবিবার সকালে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদা পারভীনকে ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক দায়িত্বভার দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবগঠিত অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীমকে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে পুনর্বহাল করার বিষয়টি তাকে অবগত করা হয়নি। তিনি বিষয়টি জেনে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ময়মনসিংহ এর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. শহিদুল্লাহ জানান, সরিষাবাড়ী সালেমা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চূড়ান্ত বরখাস্তকরণ বিষয়ে আপিল অ্যান্ড আরবিট্রেশন বোর্ডে বিচারাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, তাকে পুনর্বহাল করার বিষয়টি জেনে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৩০:৪৯ ২৯ বার পঠিত