
দেশে একটি সত্যিকারের স্বাধীন ও কার্যকর বিচার বিভাগ না থাকলে আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সুযোগ হারাতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দৃঢ়ভাবে রক্ষা ও টিকিয়ে রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার এবং জাতির কাছে জোরালো আহ্বান জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘মাসদার হোসেন মামলা: সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের শেষ লড়াই এবং জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ইশতিয়াক সেন্টার আয়োজিত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি, আইনজীবী, অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংবিধান গবেষক আইনজীবী আরিফ খান।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কোনো কারণে ব্যর্থ হলে, অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের দীর্ঘমেয়াদি সফলতাও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগের সংস্কার রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপরও নির্ভর করে। বিচার বিভাগের জন্য টেকসই স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের সুযোগ নষ্ট করা ঠিক হবে না। সংবিধানে ১১৬ অনুচ্ছেদের কারণে বিচার বিভাগে নানা সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করেন তিনি।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগ ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে দীর্ঘদিন আলোচনা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত এগারো মাস ধরে বিচার বিভাগ অন্তর্বর্তী সরকারের সব প্রচেষ্টাকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনে সহায়ক হয়েছে।
আলোচনা সভায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে একটি দৃঢ় ও তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি। একইসঙ্গে ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়া মাসদার হোসেন মামলা ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তনের ক্ষেত্রে সৈয়দ ইশতিয়াকের ভূমিকাকে বিচার বিভাগের ভিত্তিভূমি হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
সভায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বিচার বিভাগের উন্নতিতে ব্যারিস্টার ইশতিয়াক ছিলেন ভ্যানগার্ড। এরশাদ সরকারের সময়ে আট বছর সংগ্রাম করে বাংলার মাটিতে গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে তিনি কারাবরণ করেছিলেন। ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আমাদের আলোর পথের দিশারী।
তিনি বলেন, আমরা বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় চাই। তবে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা দরকার। আমরা চাই নির্বাহী বিভাগের বাইরে এসে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করুক।
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে তত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নাই। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও সুসংহত করার জন্য তত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি একটি মাইলফলক।
বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, ব্যারিস্টার আইনজীবী শুধু একজন সাধারণ আইনজীবী ছিলেন না, তিনি ছিলেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আমাদের আইন অঙ্গনের অভিভাবক।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্যে রাখেন সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নিহাদ কবির, প্রবীর নিয়োগী ও ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম।
উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৩ সালের তিনি ইন্তেকাল করেন। দেশের আইন অঙ্গনে একজন প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত ছিলেন ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ। তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এবং দুই দফা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তারই ছেলে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৩:০৯ ২৫ বার পঠিত