
জামালপুর প্রতিনিধি : জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া গুলিতে ঢাকায় শহীদ হওয়া কামরুল ইসলাম রাব্বীর স্মরণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (২০ জুলাই) বিকেলে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের পঞ্চাশী নয়াপাড়া এলাকায় শহীদ রাব্বীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “দেশের মানুষ সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচন চায়। সংস্কার ও নির্বাচন দুটোই একসাথে এগিয়ে নিতে হবে। আর সংস্কারের মধ্যদিয়েই একটি ঐক্যের বাংলাদেশ গড়তে হবে। আজকে অনেকেই মনে করেন শেখ হাসিনার পতন কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা নির্দিষ্ট কোনো দলের মাধ্যমে হয়েছে। এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ শেখ হাসিনার ধ্বংস চেয়েছে। এক সাথে আন্দোলন করে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে এদেশের মানুষ। আপনারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, আপনাদের নেতৃত্বের সাথে এ দেশের জনগণ একাত্মতা ঘোষণা করেছে। তাই বলে দেশটি কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি অত্যাচারী সরকারের পতন ঘটানোর জন্য। আর একটি অত্যাচারী কেউ মানুষের উপর জেঁকে বসবে, সেটা কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ চায় না। এ কাজ যে দল করতে চাইবেন, সে দল জনগণের আস্থা থেকে বিচ্যুত হবেন। এর পরেও যারা ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছেন, তারা সংশোধন হয়ে যান।”
শামীম তালুকদার অভিযোগ করেন, “বাংলাদেশ একটি দল আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় মেতে উঠেছে। দল ভারী করতে আওয়ামী লীগকে তাদের দলে ভিড়াতে শুরু করছে। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলের ওপর ভর করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যায়। তাদের এই নীল নকশা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নিবেন না।”
তিনি আরও বলেন, “রাব্বীর কবরের দিকে তাকিয়ে দেখুন, ঐ শহীদদের রক্তের বিনিময়েই কিন্তু সুন্দর বাংলাদেশ পেয়েছি। সুন্দর বাংলাদেশ পেয়ে অসুন্দরের পরিবেশ যারাই করবে, সে যে দলেরই হোক বা যেকোনো গোষ্ঠীরই হোক, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। বিএনপি একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চায়। সেই পথের সারথি হয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”
স্মরণ সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলার আওনা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুরুজ্জামান, শহীদ রাব্বীর বন্ধু ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার আহত ছাত্র সংগঠনের আহ্বায়ক একরামুল হাসান, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম, আওনা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মনিরুজ্জামান মানিক এবং শহীদ কামরুল ইসলাম রাব্বীর বড় ভাই অন্তর মিয়া প্রমুখ।
স্মরণ সভা শেষে শহীদ কামরুল ইসলাম রাব্বীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া পরিচালনা করা হয়। পরে গরীব ও অসহায়দের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।
জানা যায়, শহীদ রাব্বী মিয়া জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের পঞ্চাশী নয়াপাড়া গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে। তিনি রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ট্রিপল ই ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি ওয়ালটন কোম্পানিতে চাকরি করতেন। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শুরু থেকেই অংশ নেন রাব্বী।
গত ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ভাড়া বাসা থেকে বের হয়ে আন্দোলনে যাওয়ার সময় হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন তিনি। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তার মরদেহ উদ্ধার করে গ্রামের বাড়ি নিয়ে দাফন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:৫১:১৪ ৪২ বার পঠিত