
আগামী নির্বাচন বানচালে পতিত আওয়ামী লীগ দেশে ‘অনেক গন্ডগোল‘ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, দল-মতনির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মাফিয়াদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে হবে।
আজ শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন বিএনপি নেতা।
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘দ্রুত বিচার সম্পন্ন, মৌলিক সংস্কার ও সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভাটি আয়োজন করে ‘অগ্নি সোশাল ফাউন্ডেশন’ ও ‘আমাদের নতুন বাংলাদেশ’।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনের আগে কিন্তু দেশে অনেক গন্ডগোল হবে। ভারতে আশ্রয় নিয়ে মাফিয়া নেত্রী শেখ হাসিনা এই দেশকে লন্ডভন্ড করার জন্য, নির্বাচন বানচাল করার জন্য অনেক সহিংস ঘটনার অবতারণা করবেন।’
সবাইকে সর্তক থাকার তাগিদ দিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা দল-মতনির্বিশেষে দেশবাসী সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই মাফিয়াদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করব। আজকের দিনে এই হোক অঙ্গীকার।’
মেজর হাফিজ বলেন, ‘এবারের নির্বাচন হবে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এবারের নির্বাচন হবে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করার জন্য। এবারের নির্বাচন হবে হাসিনা মার্কা ও আওয়ামী লীগ মার্কা দুঃশাসনকে চিরতরে নির্বাসনে দেবার জন্য।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেজর হাফিজ বলেন, ‘আপনারা এমন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন যাকে নিয়ে দেশবাসী গর্ব করতে পারে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে, নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা সেখানে রয়েছেন। আমি আশা করব, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই গণরায় প্রতিফলিত হবে। এই নির্বাচনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছে। অনেক মানুষ জীবন দিয়েছে গণতন্ত্র ফেরানোর জন্যে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন পাওয়ার জন্যে।’
‘পুলিশ বাহিনীর সংস্কার করতে হবে’
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘এদেশের পুলিশ বাহিনী একটি পেটুয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল, বাংলাদেশ একটি পুলিশ স্টেটে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এক বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনো পুলিশ বাহিনীতে কোনো সংস্কার হয়নি।’
এই আসন্ন নির্বাচনে বাহিনী সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে কি না এ নিয়ে জনগণের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
‘অন্তবর্তীকালীন সরকারের সদস্যরা কৃতী মানুষ’
সাবেক মন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুসসহ অন্য যারা আছেন তারা নিসন্দেহে ভালো লোক, কৃতী মানুষ। প্রফেসর ইউনূস আমাদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকে বসে লন্ডনে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে, তা রক্ষা করার জন্যে আমি প্রফেসর ইউনূসকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা আশার করব, তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবেন।’
‘পিআর নয়, জনগণের ভোটে নির্বাচন হবে’
হাফিজ উদ্দিন বলেন, নির্বাচনে সাধারণ মানুষ একজন ব্যক্তিকে ভোট দিতে চায়। যিনি দেশের মানুষের পাশে থাকবেন, যার কাছে গেলে পুলিশের অত্যাচার, সমাজপতিদের অত্যাচার, গ্রামাঞ্চলে বা শহরাঞ্চলে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপাতত প্রধান আশ্রয়স্থল। জনগণ এইভাবে এখনো সচেতন কিংবা অভ্যস্থ হয়নি, রাজনৈতিক দলগুলো এতখানি পরিপক্ব হয়নি যে কেবল প্রতীকে ভোট দি্লেই তাদের সমস্যার সমাধান হবে। ফলে সরাসরি ভোটে নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তনে আমরা কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ দেখি না।’
কিছু কিছু রাজনৈতিক দল তারা ধরেই নিয়েছে যে, নির্বাচনে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে, তাদের পক্ষে নির্বাচিত হওয়া সম্ভব নয়। এই নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য তারা পিআর সিষ্টেমের কথা বলে।
জামায়াত প্রসঙ্গে
হাফিজ বলেন, জামায়াতে ইসলামী বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাকে অত্যন্ত গৌরবের সাথে উপস্থাপন করা হয়নি। তারা ভেবেছে, বাংলাদেশের মানুষের স্মরণশক্তি খুবই দুর্বল। ১৯৭১ সালে আন্দোলনের সময়ে এই দল বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল।
‘আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে, ৮১ বছর বয়স। সেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিল জামায়াতে ইসলামী, একাত্তর সালেও মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে তারা। এখন তারা নতুন নতুন বাণী নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে।
অগ্নিসেনা সোশাল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তালুকদার জহিরুল হক তুহিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও বিএনপি নেতা রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:৩৩:০৪ ৮ বার পঠিত