
জামালপুর প্রতিনিধি : মেলান্দহ উপজেলার হাজরাবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রোকশানা বেগমের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ, আর্থিক অনিয়ম এবং কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তিনি স্থানীয় একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী।
সোমবার (১১ আগস্ট) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন মাসুদুর রহমান রাজু নামের এক ব্যক্তি।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদানের পর থেকে রোকশানা বেগম শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বছর প্রায় ৬ লাখ টাকার বেশি বিনা রশিদে আদায় করেন। এই টাকার কোনো হিসাব নেই এবং গত ১০ বছরে অফিস সহকারীর সহযোগিতায় প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহজাহান ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকলেও প্রধান শিক্ষিকা তাকে নিয়মিত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার সুযোগ দেন। এর বিনিময়ে ওই শিক্ষকের প্রতি মাসের ৭ হাজার টাকা ভাতা রোকশানা বেগম নিজেই গ্রহণ করেন। একই ভাবে আরেক শিক্ষক বিল্লাল হোসেন ২০২৩ সালে পুরো এক বছর অনুপস্থিত ছিলেন, কিন্তু পরে তাকে বকেয়া বেতন বাবদ ২ লক্ষ ৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। অভিযোগকারী দাবি করেছেন, প্রধান শিক্ষিকা ও অফিস সহকারী ভুয়া রেজুলেশনের মাধ্যমে এই টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, রোকশানা বেগমের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, এর আগে তিনি একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন এবং অনৈতিক কার্যকলাপ ও দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত হন। প্রধান শিক্ষক হওয়ার জন্য নিরবচ্ছিন্ন ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হলেও তার তা ছিল না। তিনি স্বামীর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তথ্য গোপন করে এই পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
এছাড়াও অভিযোগপত্রে তিন শিক্ষকের জাল সনদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এদের মধ্যে সহকারী শিক্ষক আশরাফুল কবিরের বিবিএ সনদ, গ্রন্থাগারিক সালেহা খাতুন শিখার লাইব্রেরী সায়েন্স সনদ এবং সহকারী শিক্ষক মোর্শেদা বেগমের বিএড সনদ জাল বলে দাবি করা হয়েছে। এই শিক্ষকদের নিয়োগের সময় তাদের স্বামী ও মামারা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির প্রভাবশালী সদস্য ছিলেন।
অভিযোগকারী আরও জানান, প্রধান শিক্ষিকা রোকশানা তার নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি তিনি আইসিটি শিক্ষক তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির মিথ্যা অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলন করাচ্ছেন।
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা রোকশানা বেগম সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি বিনা রশিদে সংগৃহীত টাকা বিভিন্ন কাজে খরচ হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাসির উদ্দীন জানিয়েছেন, অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০:৫১:১২ ৪৯ বার পঠিত