
১০টি মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ১৯টি হোস্টেল ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ১৫ তলা বিশিষ্ট ছাত্র হোস্টেল এবং ২টি ১২ তলা বিশিষ্ট ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
আজ বৃহস্পতিবার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে উপদেষ্টা এই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তবে, এ উপলক্ষ্যে কোনো আয়োজন ছিল না। শুধু মাত্র ফলক উন্মোচন করে দোয়া করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ অতিথিরা। পরে তিনি হাসপাতালের ইমার্জেন্সিসহ বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন।
এ সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা পুরোনো ভাঙা হোস্টেলে থেকেছে। কখন ভেঙ্গে পড়ে এমন শংকায় ছিল তারা। এরকম রিস্ক নিয়ে তো আর পড়ালেখা করা যায় না। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, নতুন হোস্টেলের। এটা শুধু দাবি নয়, তাদের অধিকারও। আমাদের ছেলে-মেয়েরা সুন্দর জায়গা থেকে পড়াশোনা করুক এটা আমরা চাই। এই হোস্টেল হয়ে উঠুক তাদের নিরাপদ জায়গা। আনন্দের জায়গা। এখানে তাদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড বিকশিত হোক। আউটডোর কিংবা ইনডোর নানা শরীরচর্চা বা খেলাধুলা হোক। আমাদের ছেলে মেয়েরা একসময় দেয়াল পত্রিকা করতো। ম্যাগাজিন প্রকাশ করতো। ডিবেট ক্লাব ছিল। আমি আশা করি, তারা নিজেদের সৃজনশীল কর্মে জড়িত করবে।
তিনি এসময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেকের) শিক্ষানবিশ চিকিৎসক শীর্ষ শ্রেয়ানের প্রশংসা করেন। শ্রেয়ান মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) বা হৃদ্যন্ত্র বিকল (হার্ট অ্যাটাক) হওয়া রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ এনেছেন। যার বাজার মূল্য ১৭ কোটি টাকার মতো। তার গবেষণা ও প্রচেষ্টার কারণে নেদারল্যান্ডস থেকে দুই হাজার ৫০০ ভায়াল অ্যাল্টেপ্লেস ইনজেকশন এসেছে। এরই মধ্যে এসব জীবন রক্ষাকারী ওষুধ প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, মানুষের জীবন রক্ষায় তার উদ্যোগের কথা আমি পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি। তার মধ্যে মানুষের প্রতি মমত্ববোধ-দরদ আছে। যার কারণে সে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। আমি চাই, আমাদের প্রতিটি ছেলে-মেয়ের মধ্যে এই মানবিকতা তৈরি হোক।
এ সময় স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী বলেন, আমি নিজেও এই কলেজের শিক্ষার্থী ছিলাম। এখানে আবাসন সংকট অত্যন্ত প্রকট। আজকের এই কাজের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের আবাসন সমস্যার সমাধান হবে। আধুনিক হোস্টেল তৈরি হবে। এখানে শুধু আবাসন নয়, এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি, জিমনেশিয়ামসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকবে। আশা করি, এর মধ্যে দিয়ে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা করার ভালো পরিবেশ তৈরি হবে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, দেশের ১০টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ১৯টি হোস্টেল নির্মাণ কাজ শুরু করেছে সরকার। এরমধ্যে পুরাতন ৮টি এবং নতুন ২টি মেডিকেল কলেজ আছে। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ১২ তলা করে দুইটি ছাত্রীদের হোস্টেল এবং ১৫ তলা বিশিষ্ট একটি ছাত্র হোস্টেল নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ১৫ তলা বিশিষ্ট ছাত্র হোস্টেল নির্মাণে ব্যয় হবে ১০১ কোটি সাতাত্তর লাখ টাকা। এতে বিভিন্ন ফ্যাসিলিটিজের সঙ্গে আবাসিক রুম থাকবে ৩১২ টি যাতে মোট ছাত্র সিট সংখ্যা ৯৩৬। ২ টি ১২ তলা ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণে ব্যয় হবে ৪৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এখানে অন্যান্য ফ্যাসিলিটিজের সঙ্গে থাকবে ১৪৪ টি আবাসিক রুম যাতে ছাত্রী সিট সংখ্যা ৫০৪।
স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, হাসপাতালের পরিচালকসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৩৩:৫১ ২৫ বার পঠিত