
বিশ্ব অর্থনীতি বর্তমানে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে বলে বুধবার মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তবে তা এখনো অনিশ্চয়তা ও দীর্ঘমেয়াদি দুর্বল প্রবৃদ্ধির মুখোমুখি আছে বলেও জানান তিনি।
ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি ভয় পাওয়ার মতো খারাপ নয়, কিন্তু আমাদের যা প্রয়োজন তার চেয়ে ভালোও নয়।’
তিনি জানান, আইএমএফ এখন আশা করছে, মূলত যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু উন্নত, উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশের প্রত্যাশার চেয়ে ভালো পারফরম্যান্সের কারণে এ বছর ও আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সামান্যই মন্থর হবে।
জর্জিয়েভার এই মন্তব্য এসেছে আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভার আগে, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা যোগ দেবেন।
বার্ষিক বৈঠকে এ বছরও বাণিজ্য হবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন দেশের ওপর বিস্তৃত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে।
জর্জিয়েভা বলেন, ‘সব ইঙ্গিতই দেখাচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতি একাধিক ধাক্কা সহ্য করেও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থেকেছে।’
তিনি এই স্থিতিশীলতার পেছনে সচেতন নীতিমালা, বেসরকারি খাতের অভিযোজন ক্ষমতা, প্রত্যাশার চেয়ে কম শুল্ক হার এবং অনুকূল আর্থিক পরিবেশের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব এখনও পর্যন্ত শুল্কযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয়নি — অন্তত এখন পর্যন্ত।’
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্কহার এপ্রিলের ২৩ শতাংশ থেকে কমে বর্তমানে ১৭.৫ শতাংশে নেমেছে, যদিও এটি এখনো বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এই শুল্কনীতির পুরো প্রভাব এখনও প্রকাশ পায়নি এবং বিশ্ব অর্থনীতির প্রকৃত স্থিতিস্থাপকতা এখনও পুরোপুরি পরীক্ষা হয়নি।’
আইএমএফ এখনো মনে করে, মধ্যমেয়াদে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩ শতাংশের মধ্যে থাকবে, যা কোভিড-পূর্ব সময়ের চেয়ে কম।
জর্জিয়েভা বলেন, ‘বিশ্ব প্রবৃদ্ধির ধারা বদলাচ্ছে — চীন ধীরে ধীরে মন্থর হচ্ছে, আর ভারত পরিণত হচ্ছে নতুন প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তিতে।’
তিনি দেশগুলোকে আহ্বান জানান দ্রুত পদক্ষেপ নিতে, যাতে দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদন বৃদ্ধি, রাজস্ব স্থিতি পুনর্গঠন, এবং অতিরিক্ত বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবিলা করা যায়।
জর্জিয়েভা ইউরোপের অর্থনৈতিক স্থবিরতা নিয়ে সবচেয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত একজন ‘সিঙ্গেল মার্কেট সিজার’ নিয়োগ করা, যিনি সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং আর্থিক ও জ্বালানি খাতের একীভূতকরণ ত্বরান্বিত করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২:২৮:১৫ ১২ বার পঠিত