
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে এটি তালেবান শীর্ষ নেতার ভারতে প্রথম সফর।
বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তব্যে জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমাদের উভয়ের লক্ষ্যই উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি—তবে এই লক্ষ্য সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের হুমকিতে বিপন্ন।’
তালেবান সরকারের কড়াকড়ি ইসলামি ব্যাখ্যা হয়তো হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের সঙ্গে আদর্শগতভাবে বেমানান মনে হতে পারে, কিন্তু ভারত এই পরিস্থিতিকে কূটনৈতিক সুযোগ হিসেবে দেখছে।
দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক সমীকরণ দীর্ঘদিন ধরে ভারত-পাকিস্তানের পারস্পরিক অবিশ্বাসে পরিচালিত, যেখানে ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যকার বিভাজনকে কাজে লাগাতে চায় নয়াদিল্লি। পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ গত মে মাসে এক সংক্ষিপ্ত কিন্তু প্রাণঘাতী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, যা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে বিবেচিত হয়।
জয়শঙ্কর বলেন, ‘পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর আমাদের প্রতি কাবুলের সংহতি আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি।’
উক্ত হামলায় এপ্রিল মাসে ভারতশাসিত কাশ্মীরে ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন, যাদের বেশিরভাগই হিন্দু ছিলেন।
ভারত এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জয়শঙ্কর আরো বলেন, ‘ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রতি আপনার সংবেদনশীলতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’
এর জবাবে মুতাক্কি বলেন, ‘আফগানিস্তান ভারতকে একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে দেখে’, বিশেষত সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ভারত যে সহায়তা পাঠিয়েছে সেটিকে ইঙ্গিত করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কোনো গোষ্ঠীকে কারো বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে বা অন্য দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে আফগান মাটি ব্যবহার করতে দেব না।
ভারত জানিয়েছে, কাবুল ভারতীয় কোম্পানিগুলোর জন্য খনিজ সম্পদ খাতে বিনিয়োগের সুযোগও প্রস্তাব করেছে।
জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমাদের উভয়েরই বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের অভিন্ন আগ্রহ রয়েছে। আফগানিস্তানে খননক্ষেত্রে বিনিয়োগের আপনার আমন্ত্রণ আমরা গভীরভাবে প্রশংসা করি।’
তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদিও তালেবান আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বৈধতা অর্জনের চেষ্টা করছে, ভারত এখনই কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো তাড়াহুড়োয় নেই।
ভারতের সাবেক কাবুল দূত রাকেশ সোদ বলেন, ‘ভারত এখনই তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে আগ্রহী নয়।
রাশিয়া এখন পর্যন্ত একমাত্র দেশ, যারা ২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতা দখলের পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে, যদিও আরো কয়েকটি দেশের কাবুলে দূতাবাস রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৫৪:৩১ ১৮ বার পঠিত