![]()
হ্যাম্পডেন পার্কের ইতিহাস শুরু সেই ১৯০৩ সালে। দীর্ঘ যাত্রায় এই মাঠ হয়েছে সংখ্য মহারণের সাক্ষী। এবার সেই তালিকায় যোগ হলো আরও একটি অলৌকিক রাত। শেষ হলো স্কটল্যান্ডের দীর্ঘ অপেক্ষার। প্রায় তিন দশক পর ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ অর্থাৎ ফুটবল বিশ্বকাপের মঞ্চে জায়গা করে নিয়েছে স্কটিশরা। সেই স্বপ্ন পুরণ আবার অবিশ্বাস্য এক লড়াইয়ের পর– এক ওভারহেড কিক, ২২ গজের দুর্দান্ত শট এবং মাঝমাঠ থেকে করা এক গোলের মাধ্যমে!
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাতে বিশ্বকাপের ইউরোপিয়ান কোয়ালিফায়ারে ডেনমার্ককে ৪-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে স্কটল্যান্ড। স্কট ম্যাকটমিনে, লরেন্স শ্যাঙ্কল্যান্ড, কিয়েরান টিয়ের্নি এবং কেনি ম্যাকলিন স্কটল্যান্ডের পক্ষে গোলগুলো করেন। ডেনমার্কের গোল দুটি করেন রাসমুস হয়লুন্দ এবং প্যাট্রিক দরগু।
১৯৯৮ সালে শেষবার বিশ্বকাপ খেলেছিল স্কটল্যান্ড। ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের মঞ্চে ফিরল স্কটিশরা। স্টিভ ক্লার্ক, অ্যান্ডি রবার্টসন, স্কট ম্যাকটমিনে, কিয়ারান টিয়ের্নি, জন ম্যাকগিনদের সোনালী প্রজন্ম অবশেষে স্কটিশদের বিশ্বকাপের মঞ্চে জায়গা করে দিল।
অনেক বছরের হতাশা ঝেরে ফেলে বিশ্বকাপের মঞ্চে পৌঁছার আনন্দে ততক্ষণে হ্যাম্পডেন পার্কে স্কটিশদের উল্লাসে কান পাতা দায়। অন্যদিকে ১০ জন নিয়ে লড়াই করা ডেনমার্কের খেলোয়াড়রা অবিশ্বাস্য পরাজয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। আগামী গ্রীষ্মের ফুটবল উৎসবে ডেনমার্কের অংশগ্রহণ এখন নির্ভর করছে মার্চের প্লে-অফের ওপর।
অথচ এই ম্যাচে বেশ কয়েকবারই ছিটকে পড়ার মতো অবস্থায় ছিল স্কটল্যান্ড। গত শনিবার (১৫ নভেম্বর) এথেন্সে পরাজয়ের পর অনেকেই তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন।
স্বপ্নের মতো রাতের শুরুটা অবশ্য স্কটল্যান্ডের জন্য কঠিন ছিল। ডিফেন্ডার জন সুটার ওয়ার্ম-আপেই চোট পান। তার জায়গায় নামেন গ্রান্ট হ্যানলি। কিন্তু খেলা শুরু হতেই তিন মিনিটের মধ্যে সব অস্থিরতা ভুলিয়ে দেয় স্কটল্যান্ড।
ডান দিক দিয়ে দারুণ দৌড় ও ড্রিবল করে বেন গ্যানন-ডোক ক্রস করলেন। গোলের বিপরীতে মুখ করে থাকা ম্যাকটমিনের জন্য ক্রসটা সহজ ছিল না। কিন্তু নাপোলির এই মিডফিল্ডার আকাশে লাফিয়ে এক অবিশ্বাস্য ওভারহেড কিকে বল পাঠিয়ে দিলেন জালে, স্মেইকেলের ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবিশ্বাস্য গোলের বিহ্বলতা কাটিয়ে পুরো স্টেডিয়াম ফেটে পড়ে উল্লাসে।
কিন্তু মাত্র ২০ মিনিটেই বড় ধাক্কা—গ্যানন-ডোক ক্রস ব্লক করতে গিয়ে অতিরিক্ত টান পড়ে স্ট্রেচারে মাঠ ছাড়েন। হয়লুন্দ গোল করলেও অ্যারন হিকিকে ফাউল করার কারণে তা বাতিল হয়। এরপর ডেনমার্ক আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে, কিন্তু বিরতির আগে স্কটল্যান্ড কোনোরকমে এগিয়ে থাকে।
দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই ডেনমার্ক আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্কটল্যান্ড মাঝেমধ্যে ডেনিশদের আটকালেও বারবার বল হারাচ্ছিল। ড্যানিশরা সমতায় ফেরে বিতর্কিত এক পেনাল্টিতে। প্রথমে রেফারি গুসটাভ ইসাকসেনের পড়ে যাওয়াকে ফাউল মনে করেননি। দেখে মনে হচ্ছিল ইসাকসেন নিজেই লাফিয়ে পড়ে। কিন্তু ভিএআরের পর পেনাল্টি দেওয়া হয়। হয়লুন্দ বল জালে পাঠান।
এত উত্তেজনার মাঝে শুধু লাল কার্ডের অভাব ছিল—সেটাও হলো। ম্যাকগিনকে ট্যাকল করতে গিয়ে রাসমুস ক্রিস্টেনসেন দ্বিতীয় হলুদ দেখে মাঠ ছাড়লেন। এরপর শ্যাংকল্যান্ড ও অ্যাডামসকে মাঠে নামায় স্কটিশরা।
এর ফল মিলে দ্রুতই। ডেনমার্কের দুর্বল ডিফেন্ডিংয়ের সুযোগ নিয়ে লুইস ফার্গুসন কর্নার থেকে একেবারে গোল-লাইনে বল ঠেলে দেন শ্যাংকল্যান্ডকে। দক্ষ শিকারি শ্যাংকল্যান্ড সুযোগটা কাজে লাগান।
তবে, তিন মিনিটের মধ্যেই আবার গোল হজম করে স্কটল্যান্ড। ড্যানিশ আক্রমণ থেকে দরগু গোল করেন। টিয়ার্নি ক্লিয়ার করতে গেলেও বল চলে যায় ডেনমার্কের দখলে—সেখান থেকেই গোল।
নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে এগুচ্ছিল ম্যাচ। ইনজুরি টাইমের তৃতীয় মিনিটে দৃশ্যপটে হাজির টিয়ার্নি। গোল করে এগিয়ে দেন স্কটল্যাডকে। ২২ গজ দূর থেকে দূরপাল্লার গোলে বিশ্বকাপের টিকিট নাগালের মধ্যে নিয়ে আসেন এই ফুলব্যাক। এরপরই ম্যাকলিন ম্যাজিক। গোল শোধে মরিয়া ডেনমার্ক, আক্রমণে উঠে এসেছিলেন গোলরক্ষক স্মেইকেলও। তারপর? ম্যাকলিন এক পল দেখলেন আগুয়ান গোলরক্ষককে, এরপর প্রায় মাঝমাঠ থেকেই স্মেইকেলের মাথার ওপর দিয়ে বলটা পাঠালেন জালে।
ম্যাচের তখন ইনজুরি টাইমেরও নবম মিনিটের খেলা শেষ। রেফারি বাঁশি বাজাতেই সত্যি হলো স্কটল্যান্ডের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন।
এদিকে, বিশ্বকাপের প্লে-অফের টিকিট পেয়েছে ওয়েলশ। গতকাল নর্থ মেসিডোনিয়াকে ৭-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে গ্রুপ জে’তে দ্বিতীয় হয়েছে ওয়েলশ। তাতেই নিশ্চিত হয়েছে প্লে-অফে খেলা। এই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে বেলজিয়াম।
ওয়েলশের হয়ে হ্যাটট্রিক করেন হ্যারি উইলসন। এছাড়া ডেভিড ব্রুকস, ব্রেনান জনসন, ড্যানিয়েল জেমস এবং নাথান বোর্ডহেড গোল করেন। মেসিডোনিয়ার একমাত্র গোলটি আসে বোজান মিয়োভস্কির পা থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৫১:৫৪ ৬ বার পঠিত