স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইন্দোনেশিয়ার কাছ থেকে আরো সহযোগিতা প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন।
সফররত ইন্দোনেশিয়ার ডেপুটি স্পিকার ড. ফাদলি জোনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে এক বৈঠকে মিলিত হলে আলোচনাকালে স্পিকার তার কাছে এ প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।
এসময় প্রতিনিধি দলে ফাদলি জোনের সঙ্গে নূরমানসিয়া তানজুং এমপি ও লেদিয়া হানিফা আমালিয়া এমপি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
স্পিকার প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে ইন্দোনেশিয়া সরকার ও বিশেষ করে সংসদের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের বন্ধু। তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইন্দোনেশিয়ার কাছে আরও বেশি সহযোগিতার কথা জানান।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপের বিবরণ দিয়ে স্পিকার বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু একটি মানবিক সমস্যা। এ ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরী হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরো সহযোগিতার কথাও ব্যক্ত করেন।
এ ছাড়া তারা মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ইস্যু, এ ইস্যুতে আসিয়ানভূক্ত দেশসমূহের ভূমিকা, ইন্দোনেশিয়া সরকারের পাশাপাশি সংসদের সমর্থন, দু’দেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ইস্যুতে গৃহীত পদক্ষেপ, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমাতে গৃহীত পদক্ষেপ ও উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করেন। এছাড়া তারা দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
স্পিকার বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ৫টি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। এই প্রস্তাবগুলো যৌক্তিক এবং এর মাধ্যমে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব।
স্পিকার দু’বার ইন্দোনেশিয়ার বালি সফরের স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাংলাদেশে প্রজনন অধিকার ও প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষা, সামাজিক ও স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস এবং বাল্যবিবাহ রোধে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
তিনি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে তৃণমূল পর্যায়ে সংসদ-সদস্যদের নিয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে পরামর্শ সভার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে রোধসহ মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাসে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করা সম্ভব। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সহ¯্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাসসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও পদক্ষেপ নিয়েছে। সংসদ-সদস্যগণ তৃণমূল পর্যায়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে।
ইন্দোনেশিয়ার ডেপুটি স্পীকার ড. ফাদলি জোন বাংলাদেশ সম্প্রতি অত্যন্ত সফলভাবে আইপিইউ ও সিপিএ সম্মেলন সমাপ্ত করায় স্পিকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি এ সময় রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার সরকার ও সংসদের অব্যাহত সমর্থনের আশ্বাস দিয়ে বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি সন্তোষজনক।
তিনি রোহিঙ্গাদের বাস্তব অবস্থা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণের জন্য কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন মর্মে স্পিকারকে অবহিত করেন। তিনি ইন্দোনেশিয়া থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ডাক্তার প্রেরণ ও তাদের জন্য অস্থায়ী আবাসস্থল নির্মাণ করে দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ইন্দোনেশিয়ার ডেপুটি স্পিকার ড. ফাদলি জোন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে জাকার্তা সফরের আমন্ত্রণ জানান।
এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত মিসেস রিনা পি সোয়িমারনো উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৪:০৭ ৩৭৫ বার পঠিত