তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহ্মুদ বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরই প্রথম নিজেদের শাসন করার অধিকার পায় বাঙালি। আর দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অনন্য নেতৃত্বে দল চারবার ক্ষমতায় এসেছে এবং দেশ বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে’।
আজ চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির উদ্যোগে ‘গৌরবের অভিযাত্রায় ৭০ বছর : তারুণ্যের ভাবনায় আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক উন্মুক্ত আলোচনা সভায় প্যানেল আলোচকের বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সভাপতিত্বে ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহ্মুদের সাথে প্যানেল আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খাঁন ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা বাঙালি ছিলেন না। তার অন্দরমহলের ভাষা ছিল ফার্সি ও উর্দু। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে কখনো নিজেকে নিজে শাসন করার অধিকার পায়নি বাঙালি’।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অসাধারণ নেতৃত্বে উন্নয়ন ও অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বে বাঙালির পরিচয় বদলে দিয়েছেন’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে দল চারবার ক্ষমতায় এসেছে। উন্নয়ন ও অর্জনের মাধ্যমে তিনি দেশকে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন’।
এ সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর প্রশ্ন ‘স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কেউ কেউ বিভ্রান্তি ছড়ান- এবিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ আছে কিনা?’ এর জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্কটা শুরু হয় মূলত জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর। নিজে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এমন দাবি জিয়াউর রহমান জীবদ্দশায় কখনো করেননি। বিএনপি যেভাবে বলে, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক, আমার মনে হয় কবরের মধ্যে যদি জিয়াউর রহমান এমন মিথ্যাচার শুনতে পেতেন, সেখানেও তিনি লজ্জা পেতেন’।
মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করা আর ঘোষণা দেয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিয়েছিলেন, সে ঘোষণা বহুজন পাঠ করেছেন। বেতারের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা ২৬ মার্চ প্রথম পাঠ করেন তৎকালীন অবিভক্ত চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান। এরপর চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা সিদ্ধান্ত নেন সেনাবাহিনীর অফিসার দিয়ে পাঠ করানোর, তখন জিয়াউর রহমানকে দিয়ে ২৭ মার্চ তা পাঠ করানো হয়। এছাড়া ২৬ মার্চ নিজের জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী নূরুল হক শহরের বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। নূরুল হকের মতো আরো অনেক মানুষ তখন সারাদেশে মাইকিং করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন’।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যারা এই বিতর্ক তৈরি করেছে তারা ইতিহাস বিকৃত করতে চায়। তবে মানুষ এখন প্রকৃত ইতিহাস জেনে গেছে। এরপর কেউ কেউ উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলার চেষ্টা করে। এ অবস্থায় পাঠচক্র করে নতুন প্রজন্মকে প্রকৃত ইতিহাস জানানোর জন্য ছাত্রলীগ উদ্যোগ নিতে পারে’।
সভায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে আবারো পেছনে নিয়ে যাবার জন্য অনেক চক্রান্ত হয়েছে। জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ তারা দু’জনে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এরশাদ দেশের কিছু উন্নয়ন করলেও তাদের মন ছিল অন্যদিকে। বাংলাদেশকে সব সময় সঠিক পথে পরিচালিত করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর থেকে দলকে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠিত করেছেন। সবকিছুর ঊর্ধ্বে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করে সোনার বাংলা নির্মাণে আওয়ামী লীগের অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবেনা। শেখ হাসিনা সারা বিশ্বে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন’।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবীরা ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগকে কীভাবে দেখতে চান, সে বিষয়ে নানা প্রশ্ন করেন। মঞ্চ থেকে প্যানেল বক্তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে নানা বিষয়ের প্রশ্নের জবাব দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৫১:৫০ ১১৬ বার পঠিত