এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের বকেয়া অবসর ও কল্যাণ ভাতা পরিশোধে ২ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা প্রয়োজন। যার বিপরীতে মাত্র আড়াইশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে সংশ্লিষ্ট দুটি সংস্থা। অর্থাৎ বসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের বকেয়া অবসর ও কল্যাণ ভাতা বাবদ ২ হাজার ৭২৪ কোটি টাকার সংকট তৈরী হয়েছে।
সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এতথ্য জানিয়েছেন। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) মো. জিয়াউল হক মৃধার প্রশ্নের লিখিত জবাবে মন্ত্রী জানান, বকেয়া অবসর ভাতা দিতে সরকারের কাছে ২ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা চেয়েছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও কর্মচারি অবসর সুবিধা বোর্ড। একইসঙ্গে তাদের বকেয়া কল্যান ভাতা দিতে ৭০০ কোটি টাকা চেয়েছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারি কল্যাণ ট্রাস্ট। এই চাহিদার বিপরীতে অবসর সুবিধা বোর্ড চলতি অর্থবছরে মাত্র দেড়শ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। আর গত ও চলতি অর্থবছর মিলিয়ে মাত্র ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে কল্যাণ ট্রাস্ট।
শিক্ষামন্ত্রীর দেওয়া তথ্য মতে, অবসর সুবিধা বোর্ডে ২০১৪ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে ৩৫ হাজার আবেদন জমা হয়েছে। এগুলো নিষ্পত্তি করতেই প্রায় এক হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। এরই প্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরে এককালীন ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং পুঞ্জীভূত ঘাটতি পূরণে অতিরিক্ত আরো ১৭৪ কোটি টাকা চেয়েছে বোর্ড। এর বিপরীতে দেড়শ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষক-কর্মচারি কল্যাণ ট্রাস্টও ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের পর জমা হওয়া সকল আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। বর্তমানে পুঞ্জীভূত আবেদনের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। এই আবেদনগুলো নিষ্পন্ন করার জন্য ৭০০ কোটি টাকা চেয়েছে কল্যাণ ট্রাস্ট। এর বিপরীতে গত ও চলতি অর্থবছরে মাত্র ৫০ কোটি টাকা করে মোট ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৮ হাজার ১৫৮টি। এর মধ্যে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৭ হাজার ৭২২টি। বিগত অর্থবছরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মোট বাজেট বরাদ্দ ২৬ হাজার ৮৫৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকার মধ্যে এমপিওখাতের জন্যেই বরাদ্দ ছিলো ১২ হাজার ২৮৯ কোটি ৭৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।
এদিকে সংসদে সরকারী দলের সদস্য মো. নুরুল ইসলাম সুজনের প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, বর্তমানে ৫ হাজার ৬৭৯টি এমপিওবিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা প্রণয়ন করে সম্মতির জন্য অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জাতীয় পার্টির এ কে এম মাঈদুল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, সরকার দেশের সকল উপজেলায় পর্যায়ক্রমে একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত একশ’টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে বাকি ৩৮৯টি উপজেলায় একটি কলে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপনের জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:২৮:৫০ ৩৬৬ বার পঠিত