চট্টগ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ২৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে সচল রয়েছে মাত্র ১১টি। গ্যাস, জ্বালানি তেলের অভাব ও কাপ্তাই লেকের পানির স্তর নেমে যাওয়ার কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে চাহিদার মাত্র ৬০ ভাগ সরবরাহে তীব্র দাবদাহ ও লোডশেডিংয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন জনসাধারণ।
চট্টগ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ২৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টিই বন্ধ রয়েছে। বেশির ভাগ কেন্দ্র গ্যাস ও জ্বালানি তেলের অভাবে বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া কাপ্তাই লেকের পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ৫টির মধ্যে চারটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। আর চালু থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা মোট ১ হাজার ২৫৮ মেগাওয়াট। কিন্তু এসব কেন্দ্র থেকে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৬৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
এদিকে রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪২০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। শিকলবাহার ২২৫ ও ১২৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুইটিও বন্ধ। সেই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি। এ ছাড়া বন্ধ রয়েছে রিজেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট, এনার্জি প্যাক, টেকনাফ সোলার ও কাপ্তাই সোলার।
জ্বালানি সংকট ও পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সাময়িক দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী এম রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, ‘পানির স্তরের কারণে আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারি না। এখন যে পরিমাণ পানি আছে, তাতে আমরা শুধু একটি ইউনিট চালাতে পারব। ঘাটতিজনিত কারণেই মূলত এ লোডশেডিং হচ্ছে।’
এ অবস্থায় অসহনীয় লোডশেডিংয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে তীব্র দাবদাহে ইফতার কিংবা সেহেরির সময় বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের ভোগান্তি পৌঁছায় চরমে। এতে ভোগান্তিতে পড়া এক ব্যক্তি বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের কারণে ছোট ছোট বাচ্চারা বেশি কষ্ট পাচ্ছে। বিদ্যুৎ দুই ঘণ্টা থাকলে ৫ ঘণ্টা থাকে না। সারারাতই কষ্ট করতে হচ্ছে।’
শুধু বাসাবাড়ি নয়, বিদ্যুৎ না থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। এ বিষয়ে এক রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী বলেন, ‘বিদ্যুতের জন্য সন্ধ্যার পর কোনো ক্রেতা রেস্তোরাঁয় বসতে পারেন না। এদিকে জেনারেটর চালিয়ে আমাদের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এমনিতেই তো ব্যবসার অবস্থা ভালো না।’
শিডিউল করে লোডশেডিং করার পরামর্শ দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরামের সভাপতি আবু তৈয়ব বলেন, ‘কোন এলাকায় কত সময় বিদ্যুৎ থাকবে না, তা আগে থেকে জানা গেলে আমরা সেই অনুসারে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতাম। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় আমাদের যন্ত্রপাতি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের মটর জ্বলে যাচ্ছে, আমাদের লাইট জ্বলে যাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, প্রতিদিন গড়ে চট্টগ্রামে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াট। ফলে তীব্র দাবদাহ ও লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় ব্যহত হচ্ছে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫২:০৫ ১৪০ বার পঠিত