এতকিছুর পরও ইসরাইলকে কেন চোখ বুজে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র?

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » এতকিছুর পরও ইসরাইলকে কেন চোখ বুজে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র?
রবিবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৩



এতকিছুর পরও ইসরাইলকে কেন চোখ বুজে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র?

ইসরাইলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র- এ নিয়ে ইতিপূর্বে কারো সন্দেহ থাকলেও চলমান এই সংঘাতে তা দূর হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র আবারো প্রমাণ করে দিয়েছে তারাই ইসরাইলের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। তাই তো হামাসের সঙ্গে চলমান এই সংঘাতের মধ্যেই সংহতি প্রকাশের জন্য ইসরাইল ছুটে গিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টে জো বাইডেন। আর এতেই ক্ষান্ত নন, প্রতিটি ইস্যুতে ইসরাইলের সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন তিনি।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পাল্টা জবাবে ফিলিস্তিনের গাজায় অবিরাম বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এই হামলায় রোববার (২৯ অক্টোবর) পর্যন্ত ৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ২০ হাজার। শুধু তাই নয়, অবরুদ্ধ গাজাকে আরও বেশি মানবিক সংকটে ফেলে দিয়েছে ইসরাইল। সেখানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাবার, ওষুধ সবকিছু ফুরিয়ে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিমান হামলা ছাড়াও ভয়াবহ মানবিক সংকটে বহু মানুষ মারা যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।

কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো- এরকম পরিস্থিতিতেও মন গলছে না যুক্তরাষ্ট্রের। তারা এখনো দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ইসরাইলকে সমর্থন করে যাচ্ছে। কিন্তু কী কারণে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে এত সমর্থন করে ?

যুক্তরাষ্ট্র- ইসরাইলের বন্ধুত্ব শুরু যেখানে
দুই দেশের বন্ধুত্বের শুরু হয় ১৯৪৮ সালে। ওই বছরের ১৮ মে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান প্রথম ইসরাইলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। ১৯৪৯ সালের ২৮ মার্চ মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস গ্রোভার ম্যাকডোনাল্ড তার প্রমাণপত্র উপস্থাপন করার পর কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হয়। তারপর থেকে ধীরে ধীরে ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে উঠে; যা এখনো।

দুই দেশের সম্পর্ক ১৯৪৮ সালে শুরু হলেও ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর থেকে সম্পর্কটি বিকাশ লাভ করতে শুরু করে। সেই যুদ্ধে ইসরাইল আরব রাষ্ট্রগুলোর: মিশর, সিরিয়া ও জর্ডানের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে। আমেরিকার কোনো সামরিক সহায়তা ছাড়াই ছয় দিনের মধ্যে আরবদের পরাজিত করেছিল ইসরাইল। ইসরাইল জয়লাভের পর সিরিয়া ও মিশরের কিছু অংশ দখল করে। এরপর ফিলিস্তিনের কিছু অঞ্চলও দখলে নেয়। তখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে দ্ব্যর্থহীনভাবে সমর্থন করা শুরু করে।

এরপর ১৯৭৩ সালের দিক থেকে ইসরাইলকে প্রকাশ্যে সহায়তা করা শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক বন্ধনের পাশাপাশি পারস্পরিক স্বার্থের দ্বারা ঘনিষ্ঠভাবে আবদ্ধ। মূলত এতে যুক্তরাষ্ট্রেরও অনেকটা স্বার্থ জড়িত ছিল। আরব দেশগুলোর বৈরী আচরণ প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্র এ পথ বেছে নেয়।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সম্পর্ককে বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল কূটনৈতিক সম্পর্কও বলা যায়। প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্র বেশিরভাগ অস্ত্র ইসরাইলিদের কাছে বিক্রি করত। সেই সঙ্গে মার্কিন ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার অনুমতি দিয়েছিল। ১৯৮০ এবং ৯০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল অস্ত্রে গবেষণা, উন্নয়ন ও উৎপাদনে সহযোগিতা শুরু করে। মার্কিন সহায়তা ইসরাইলি অস্ত্রের সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করেছে।

২০১৯ সালে স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপির অধীনে ইসরাইল প্রতিবছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩.৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা পায়। এটি ২০২২ সালে ইসরাইলের মোট সামরিক বাজেটের প্রায় ১৬ শতাংশ। আর্থিক সহায়তা ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যৌথ সামরিক অনুশীলন, সামরিক গবেষণা এবং অস্ত্র উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত করতে ইসরাইলের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বিনিময়ে অংশগ্রহণ করে।

১৯৮৫ সালে ইসরাইলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের হার অনেক বেড়েছে। ইসরাইলে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পাঁচটি রফতানি হলো-হীরা, যন্ত্রপাতি, কৃষিপণ্য, বিমান এবং অপটিক ও চিকিৎসা যন্ত্র। ইসরাইল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পাঁচটি আমদানি হলো-হীরা, ওষুধ পণ্য, যন্ত্রপাতি, অপটিক এবং চিকিৎসা যন্ত্র এবং কৃষিপণ্য। এছাড়াও শীর্ষস্থানীয় মার্কিন কোম্পানিগুলোর সিইও বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইহুদি।

এআইপিএসির অবদান
প্রতিবছর ওয়াশিংটন ডিসিতে বার্ষিক সম্মেলন করে আমেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (এআইপিএসি)। এতে প্রায় ২০ হাজার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন। এই সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো মার্কিন রাজনীতির শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতিবছর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সম্মেলনে অংশ নেন।

এআইপিএসি ছাড়াও ইসরাইলপন্থি জে স্ট্রিট নামে একটি ছোট সংগঠন রয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা মূলত এই সংগঠন তৈরিতে ভূমিকা রেখেছেন। তাদের লক্ষ্য, মার্কিন রাজনীতিতে একটি সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করা, যারা ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের প্রতি সোচ্চার হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কী পরিমাণ সামরিক সহায়তা পায় ইসরাইল ?

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী যে সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পায় ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ইসরাইলকে তিন বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে। ১৯৪৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ইসরাইলকে সামরিক ও প্রতিরক্ষা সহায়তা বাবদ ১২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে ওয়াশিংটন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মিশরের চেয়ে ইসরাইলের অর্থ গ্রহণের মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ।

২০২৩ সালে ইসরাইলকে ৩৮০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দেয় ওয়াশিংটন। এই মুহূর্তে ইসরাইলকে আরও অর্থ সহায়তার জন্য বাইডেন প্রশাসন কংগ্রেসের কাছে তহবিল চাইবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৬:৪৫   ৭৬ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


টেক্সাসে ঝড়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ জনে
গাজায় ১০ দিন ধরে চিকিৎসাসামগ্রী পাচ্ছে না ডাব্লিউএইচও
মুম্বাইয়ে বিলবোর্ডের মালিককে গ্রেফতার
ইসরায়েলকে গাজায় অভিযানের ‘অজুহাত’ দিয়েছে হামাস : মাহমুদ আব্বাস
ফিলিস্তিনের সব অঞ্চলে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের আহ্বান আরব লীগের
গাজা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বাহরাইনে যাচ্ছেন আরব নেতারা
চীন সফরে আরো সহযোগিতার আশা পুতিনের
সৌদি পৌঁছেছেন ২১ হাজার হজযাত্রী
১২ ইসরায়েলি সৈন্যকে হত্যার দাবি হামাসের
স্লোভাক প্রধানমন্ত্রী ফিকো’র জীবন ঝুঁকিমুক্ত: উপ-প্রধানমন্ত্রী

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ