সংসদ ভবন, ৪ মার্চ, ২০২৪ : শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় সংসদে দেয়া রাষ্ট্রপতির ভাষণ জাতির কাছে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা সরকারের এক উন্নয়ন কাব্য। বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক এই ভাষণ যখন পড়বেন তখন দেখবে এ বাংলাদেশের চিত্র, গণমানুষের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি আগে কি ছিল এবং বর্তমানে কি আছে তার একটি চমৎকার ব্যাখ্যা, তার চমৎকার প্রতিফলন রাষ্ট্রপতির ভাষণে উঠে এসেছে।
জাতীয় সংসদে আজ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। জাতীয় সংসদের সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন প্রস্তাবটি সমর্থন করেন।
শিক্ষা খাতে বর্তমান সরকার এবং তার আগের সরকারগুলোর কার্যক্রমের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ২০০৬-০৭ সালে বাংলাদেশের যে জাতীয় বাজেট ছিল যেটা বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের সর্বশেষ বাজেটের আকার ছিল ৬৩ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দেয়া বাজেটে শুধুমাত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ এবং প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য যে বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা হচ্ছে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই তিনটি মন্ত্রণালয়ের যে বরাদ্দকৃত বাজেট সেটা বাংলাদেশে বিএনপি-জমায়াত সরকারের যে জাতীয় বাজেট তারচেয়ে ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী দেশকে এমনভাবে পরিচালনা করছেন, দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এমনভাবে হয়েছে, সেই অর্থনীতি থেকে জাতীয় রাজস্ব আয় করে শিক্ষা খাতে যে বিশাল বাজেট তিনি বরাদ্দ দিয়েছেন এবং শিক্ষা খাতে যে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে সেটা আজ প্রমাণিত।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন ২০০৯ সালে দায়িত্ব নিয়েছেন সেই সময়কাল থেকে এবং ২০২৩ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর এই ১৫ বছরে ১ লাখ ৫ হাজার ৮০১ টি শ্রেণীকক্ষ নির্মাণ করেছে। এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ মিলিয়ে প্রায় ২১ হাজার ১০২ টি ভবন নির্মাণ করেছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ৭০ শতাংশ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান কোন না কোন ধরনের নতুন অবকাঠামো বা সম্প্রসারিত ভবন পেয়েছে। বাংলাদেশে বিগত ১৫ বছরে ৭০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এর আগের কোন সরকারের সময়ে এতগুলো ভবন কখনো পায়নি এটি হচ্ছে ভবন অবকাঠামগত উন্নয়ন। হাজার হাজার শিক্ষককে মান্থলি পেমেন্ট অর্ডারের মাধ্যমে বেতন কাঠামোর মধ্যে আনা হয়েছে। এখনো অনেক শিক্ষক এর বাইরে আছেন, আমরা চেষ্টা করছি সেই সকল শিক্ষককে যেন মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিও কাঠামোর মধ্যে আনতে পারি সেই প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন ২০০৯ সালে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন দেশের সাক্ষরতার হার ছিল ৪৫ শতাংশ এখন সেটা এসে দাঁড়িয়েছে ৭৬ শতাংশে। কারিগরি শিক্ষা থেকে উচ্চ শিক্ষায় যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়েছে এটি সরকারের শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের ফল বলে আমরা মনে করি। আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এটি বিরাট ভূমিকা রাখবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আমির হোসেন আমু বলেন, বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা শুনেছি, অনেকে অনেক কথা বলেছেন, তারা গণতন্ত্রের শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এই আওয়ামী লীগের সৃষ্টি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। বঙ্গবন্ধু নেতৃত্ব দিয়েছেন সব সময় মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবার জন্য।
তিনি বলেন, আজকে যারা গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় তাদের জন্ম কিন্তু গণতান্ত্রিক পন্থায় হয়নি। এমনকি তাদের গঠনতন্ত্রে আজ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারা নেই। আজকে তাদের দল পরিচালিত হয় একজনের আঙ্গুলের ইশারায়। এই দেশ নিয়ে তারাই ষড়যন্ত্র করছে, যারা এই দেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, যারা পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর দর্শন হিসেবে রাজাকার আল বদর সৃষ্টি করেছিল, যারা এই দেশে নারী হত্যার সাথে জড়িত ছিল, গণতন্ত্র হত্যার সাথে জড়িত ছিল তারাই দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র করছে।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য খাতের সাফল্য আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছে। আগে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬০ বছর, এখন ৭৩ বছর। দেশে টিকা দানের ৫৮ ভাগ সফলতা এসেছে। আগে ছিল মাত্র ২০ ভাগ। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে কমিউনিটি ক্লিনিক এর মাধ্যমে অথচ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় এই কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে সেখানে ছাগলের খামার করা হয়েছিল।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি, চাঁদাবাজিসহ চলমান সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা না করলে সমাধান বের হবে না। সরকার শক্তিশালী হওয়ার পরও কেন এসব সমস্যা সমাধান করতে পারছে না নিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন।
মূল্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি এমন একটা পর্যায়ে গেছে সাধারণ মানুষের আসলে নাভিশ্বাস উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, খাদ্য দ্রব্য এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দব্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ে আমাদের কথা বলতে হবে, তা নিয়ে কথা বলছি না। এ প্রশ্নগুলো আমাদেরকে সংসদে করতে হবে।
চাঁদাবাজি বন্ধের আহবান জানিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, চাঁদাবাজি কেন আমরা রোধ করতে পারছি না। রোজার আগে আমরা মনে করেছিলাম জিনিসপত্রের দাম নি¤œমুখী হবে কিন্তু সেটা হচ্ছে না।
আলোচনায় আরও অংশ নেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম নাহিদ ইজাহার খান, সরকারি দলের সদস্য মোফাজ্জল হোসাইন চৌধুরী মায়া, রাগেবুল আহসান রিপু, অপরাজিতা হক, আ, স. ম. ফিরোজ, শাম্মী আহমেদ, আনোয়ার হোসেন খান, ফরিদুন্নাহার লাইলী, বেদৌরা আহমেদ সালাম, উম্মি ফারজানা ছাত্তার, শেখ আনার কলি পুতুল, রুনু রেজা, মোসা. ফারজানা সুমি, ঝর্না হাসান, দিলোয়ারা ইউসুফ, জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যা, নাদিয়া বিনতে আমিন, অনিমা মুক্তি গমেজ, শাহিদা তারেখ দিপ্তি ও মোছা: আশিকা সুলতানা। স্বতন্ত্র সদস্য মো. মশিউর রহমান মোল্লা সজল ও মাহমুদুল হক সায়েম।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৮:৪৬ ৫৬ বার পঠিত