
জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ভূমি সহকারী কর্মকর্তার উদ্যোগে দীর্ঘদিন এক প্রভাবশালী ব্যক্তির দখল থাকা ২০ কোটি টাকার সরকারি সম্পদ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জুয়েল আকন্দ নিউজ টু নারায়ণগঞ্জ কে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কামরাবাদ ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে থাকা পৌর শহরের মেইন রোড সংলগ্ন শিমলা গোপীনাথ মৌজার ৩৯৬ ও ৩৯৭ নং দাগে ১ একর ২১ শতাংশ ভূমি এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি মরহুম তছের উদ্দিন সরকারের উত্তরসরিরা জোরপূর্বক দখল করে
দীর্ঘদিন যাবৎ বসতবাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে ভোগদখল করে আসছিল। এছাড়াও সম্প্রতি ওই জমিতে থাকা শতবর্ষী পুরানো একটি পুকুর তারা মাটি ভরাট করে আবাসন প্রকল্পের মতো প্লট আকারে বিক্রির পায়তারা করছিল। এই দেখে স্থানীয় সচেতন মহল অভিযোগ ও ব্যাপক সমালোচনা সহ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে।
তবুও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় হতে নেওয়া হচ্ছিল না যথা উপযোগী ব্যবস্থা। যার প্রেক্ষিতে কামরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জুয়েল আকন্দ নিজ উদ্যোগেই ওই ভূমির তদন্ত শুরু করেন এবং ভূমির কাগজপত্র ও মাঠপর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিষয়টির সত্যতা পান।
এরপরই তিনি জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম , উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদ্দাম হোসেন এর নিকট ওই ভূমির সার্বিক তথ্যাদি প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরেন এবং তাদের করা তিনটি খারিজ বাতিলের আবেদন করেন। পরে ভূমি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিচক্ষণতার সহিত যাচাই-বাছাই করে অবৈধ দখলকারী করার তিনটি খারিজ ২০২৪ সালের ২৫ এপ্রিল তারিখে বাতিল করেন।
পরে উক্ত খারিজ বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সূমী আক্তার এর নিকট আপীলের জন্য সরিষাবাড়ী পৌর সভার শিমলা পল্লী পশ্চিম পাড়া গ্রামের বাসিন্দা ভূমিখেকো মৃত তছের উদ্দিন সরকার এর ছেলে সুলতান আহম্মেদ, ইকবাল আহম্মেদ রিয়াদ ও তার ৪ মেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সূমী আক্তার দীর্ঘ শুনানী শেষে গত ৭ এপ্রিল তারিখে তাদের আপীল আবেদন নামঞ্জুর করে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষে রায় প্রদান করেন।
সূত্র জানায়, তৎকালীন কামরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা গোলজার হোসেন ও ইউনিয়ন ভূমি উপ- সহকারী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে সুলতান আহম্মেদের পরিবারবর্গকে এই খারিজ ৩টি প্রদান করেন।
তাই স্থানীয় সচেতন মহল এই খারিজ বাতিলের আপীল নামঞ্জুর করা কে একটি ঐতিহাসিক রায় বলে অভিহিত করেছেন এবং বলছেন, সরকারি সম্পদ কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না। সরকারি সম্পদ প্রভাব খাটিয়ে ক্ষনিকের জন্য ভোগদখল করা গেলেও স্বত্ববান হয় না।
এবিষয়ে স্থানীয়রা বলেন, কামরাবাদ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জুয়েল আকন্দ নিজ উদ্যোগে যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তার সততা ও নির্ভীকতার কারণেই আজ বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০ কোটি টাকার সম্পদ ফিরে পেয়েছে। তারমত সৎ ন্যায় নিষ্ঠাবান সাহসী কর্মকর্তা দেশ ও জাতির জন্য নিরাপদ, আশীর্বাদ স্বরূপ। যারা অপকর্ম ও দুর্নীতির সাথে লিপ্ত তারা দেশ ও জাতির শক্র। তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনী ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জুয়েল আকন্দ বলেন, “সরকারি জমি রক্ষা করা আমাদের সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্ব। যারা ভূমি দখল করেছিল তাদের নিকট থেকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের নিকট ফেরত দেওয়া হয়েছে। এখানে আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। এছাড়াও তিনি বলেন, যদি কোথাও ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে কোন অনিয়ম দেখেন তাহলে দ্রুত আমাদের জানাবেন বলে অনুরোধ করেন তিনি।
এবিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিজা রিছিল বলেন, সরকারি ভূমি কেউ দখল করে বিক্রি করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:২০:১৩ ৩২৪ বার পঠিত