
ভারতের রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ তুলেছেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) মিলে ভোট চুরি করেছে।
প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) ও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার বেঙ্গালুরুতে এক শোভাযাত্রায় বক্তব্য দেন রাহুল গান্ধী। সেখানে তিনি এই অভিযোগ তোলেন। বলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি মিলে ভারতের সংবিধানের ওপর গুরুতর আঘাত হানেন।
রাহুল গান্ধী আরও বলেন, ‘লোকসভা নির্বাচনের পর মহারাষ্ট্রে নির্বাচন হল। সাধারণ নির্বাচনে আমাদের জোট জয়লাভ করে। অথচ চার মাস পর মহারাষ্ট্রে বিজেপি জিতে গেল। এই অপ্রত্যাশিত ফল আমাদের তদন্তে বাধ্য করে। আমরা দেখি, ওই নির্বাচনে এক কোটিরও বেশি নতুন ভোটার ভোট দিয়েছেন। আর যেখানেই এই নতুন ভোটাররা ছিল, সেখানেই বিজেপি জিতেছে।’
বক্তব্যে রাহুল গান্ধী ভোটার তালিকায় ব্যাপক জালিয়াতির আশঙ্কা প্রকাশ করেন। দাবি করেন, বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের যৌথ অপচেষ্টায় গণতন্ত্রকে বিপন্ন করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দপ্তর ইন্দিরা ভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন রাহুল। ন্যাশনাল হেরাল্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সময়ও তিনি ভোট চুরির অভিযোগ তোলেন। এর পক্ষে কিছু প্রমাণও তুলে ধরেন। এর মধ্যে ছিল, ভোটার তালিকায় অনিয়ম, সন্দেহজনক ভোটার উপস্থিতি ও ইলেকট্রনিক তথ্যের গরমিল।
সংবাদ সম্মেলনে ‘ভোট চুরির’ ঘটনাকে ভারতের গণতন্ত্রের ওপর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের সঙ্গে তুলনা করেন রাহুল। তিনি কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল লোকসভা কেন্দ্রের মহাদেবপুরার উদাহরণ দেন। দাবি করেন, এখানে মোট সাড়ে ৬ লাখ ভোটের মধ্যে ১ লাখের বেশি চুরি হয়েছে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধী বলেন, বিজেপি ২৫টি লোকসভা আসনে ৩৩ হাজারেরও কম ভোটের ব্যবধানে জিতেছে। এর মানে, নরেন্দ্র মোদিকে ক্ষমতায় থাকার জন্য মাত্র ২৫টি আসনে ‘ভোট চুরি’ করলেই চলতো। আর এজন্যই নির্বাচন কমিশন ডিজিটাল ভোটার রোল দিচ্ছে না।
রাহুল গান্ধী বলেন, কংগ্রেসের গবেষণায় মহাদেবপুরা এলাকায় ১ লাখেরও বেশি ডুপ্লিকেট ভোটার, অজ্ঞাত ঠিকানা ও একাধিক ভোটারকে একসঙ্গে তালিকাভুক্ত করার মতো অনিয়ম ধরা পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রাহুল বলেন, কংগ্রেসের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন গবেষকের একটি বিশেষ দল টানা ছয় মাস ধরে মহাদেবপুরার হাজার হাজার ভোটার রেকর্ড বিশ্লেষণ করেছে। প্রায় সাত ফুট উঁচু কাগজপত্রের স্তূপ ঘেঁটে পাঁচটি ভিন্ন কৌশলে ভোট কারচুপির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কংগ্রেস যেসব প্রমাণ পেয়েছে সেগুলো হলো, ১১ হাজার ৯৬৫ ‘ডুপ্লিকেট’ ভোটার, ৪০ হাজার ৯টি ভুয়া ঠিকানা, একই ঠিকানায় ১০ হাজার ৪৫২ ভোটারের নিবন্ধন, ৪ হাজার ১৩২টি ভুল ছবি ব্যবহার এবং ৩৩ হাজার ৬৯২টি নতুন ভোটার নিবন্ধন ফরমের অপব্যবহার।
সংবাদ সম্মেলনে রাহুল গান্ধী বলেন, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে মতামত জরিপ, এক্সিট পোল, এমনকি কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ জরিপের সঙ্গে ঘোষিত ফলাফলের ব্যাপক অমিল পাওয়া গেছে।
রাহুল গান্ধী দাবি করেন, নির্বাচন কমিশন এই অনিয়মের তথ্য উদঘাটনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। যদি কমিশন ইলেকট্রনিক ডেটা দিত, তাহলে তা কয়েক সেকেন্ডেই বিশ্লেষণ করা যেত। কিন্তু তারা ছয় মাস ধরে ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র বিশ্লেষণ করতে বাধ্য করেছে।
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলেনের প্রসঙ্গ ধরেই শুক্রবার বেঙ্গালুরুতে শোভাযাত্রায় বক্তব্য দেন রাহুল গান্ধী। বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমাকে হলফনামা দিতে বলছে, শপথ নিয়ে তথ্য দিতে বলছে। আমি তো সংসদের ভেতরে সংবিধান হাতে নিয়ে শপথ নিয়েছি।’
রাহুল অভিযোগ করেন, তাঁর উপস্থাপিত তথ্যের ভিত্তিতে মানুষ যখন নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, কমিশন তখন নিজেদের ওয়েবসাইটই বন্ধ করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:২১:৫৩ ৬ বার পঠিত