
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টা অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দাবি জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে দলটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
বৈঠক শেষে গণ অধিকার পরিষদের সহসভাপতি ফারুক হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যে চারটি নির্বাচন হয়েছিল, তখন আমাদের আরপিওতে বিধান ছিল যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। যেহেতু আমরা একটি ভিন্ন পরিস্থিতিতে বর্তমানের অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছি আমরা আজকে কমিশনকে জানিয়েছি যে এই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ এবং এই সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনোভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
এটা নৈতিকতার সঙ্গে যায় না। একই সঙ্গে তারা যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এটা দেশি-বিদেশি নানাভাবে আমাদের জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আমরা আমাদের আপত্তির বিষয়টি কমিশনকে স্পষ্ট করে জানিয়েছি।’
এ সময় প্রতীক ইস্যুতে জাতীয় নাগরিক পার্টির দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রতীক নিয়ে বেশ কয়েকটি দল নির্বাচন কমিশনকে বারবার বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলার চেষ্টা করছে।
গেজেটে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার সত্যেও দু-একটি রাজনৈতিক দল একটি নির্দিষ্ট প্রতীক বারবার চেয়ে নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি কমিশনের যে বিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ তার নেই। আপনাদের বিধানের মধ্যেই থাকতে হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপে ফ্যাসিবাদের সহযোগীদের ডাকা যাবে না জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন খুব শিগগির রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করবেন।
আমরা আমাদের জায়গা থেকে কমিশনকে জানিয়েছি, যে অবশ্যই আপনারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন। তবে যারা বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদ এবং ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিলেন তাদের কোনোভাবে এই আনুষ্ঠানিক বৈঠকে আপনারা আমন্ত্রণ জানাতে পারেন না এবং সুযোগও নেই।’
এদিকে বৈঠকে গণ অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে ৯টি দাবি জানানো হয়। এ দাবিগুলো হলো—
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটদান নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দল, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি সংশ্লিষ্টদের রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে রাখা যাবে না।
প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে এবং কেন্দ্রের বাইরে একটি জায়ান্ট স্ক্রিনে জনসাধারণের জন্য কেন্দ্রের ভেতরের ভোট কার্যক্রম ও ভোট গণনা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে ব্যালটবাক্স উপজেলাতে পাঠানোর সময় এবং ভোট কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আসা পর্যন্ত সার্বক্ষণিক প্রার্থীদের এজেন্টদের সাথে রাখতে হবে। ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্র দখল ও কালো ভোটের অভিযোগ থাকলে ভোটগ্রহণ বন্ধ করতে হবে। কোনো প্রার্থীর সমর্থকরা অন্য প্রার্থীর সমর্থকদের নির্বাচনী কাজে বাধা প্রদান, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করলে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিগত তিনটি নির্বাচনে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছে, এমন কোনো কর্মকর্তাকে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে হবে। বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের কোনো উপদেষ্টা আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না, এমন বিধান যুক্ত করতে হবে তফসিলের পর প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে।
বৈঠকে গণ অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর, সিনিয়র সহ সভাপতি ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদ সদস্য শাকিল উজ্জামান, অ্যাডভোকেট নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, সহ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আশরাফুল রায়হান এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন ইউসুফ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:০৭:১৩ ৮ বার পঠিত