দুবাই শেখদের অভাবনীয় ভোগবিলাস, ধনসম্পদের অপচয়!

প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » দুবাই শেখদের অভাবনীয় ভোগবিলাস, ধনসম্পদের অপচয়!
শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২২



দুবাই শেখদের অভাবনীয় ভোগবিলাস, ধনসম্পদের অপচয়!

গাড়ি-বাড়ি, দামি গহনা এবং নানান শখ-আহ্লাদের জীবনযাপনকে যদি বিলাসী জীবন বলা হয়ে থাকে, সেদিক থেকে দুবাইয়ের শেখরা বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। তাদের বিলাসিতা এমন পর্যায়ের যে রাজা-বাদশাহরা পর্যন্ত এমন জীবন কল্পনাও করতে পারেন না।

আলো ঝলমলে আকাশচুম্বী সব অট্টালিকায় তাদের বসবাস। সোনার তৈরি গাড়িতে চড়েন তারা। তাদের খাবার-দাবারও যেন সোনার তৈরি। তাদের নিত্যনতুন শখ, সাধ আর আহ্লাদ দেখে যে কারো চোখ কপালে উঠতে বাধ্য!

দুবাই শহর কেমন

অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা, দুবাই একটি দেশ। কিন্তু আসলে তা না। এটা একটা শহর। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর অন্যতম সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর দেশটির সাত রাজ্যের একটি এ দুবাই। রাজ্য ও রাজধানীর নাম একই।

বিশ্বের কাছে দুবাই যেন এক স্বপ্নপুরী! বিলাসে ও আভিজাত্যে অতুলনীয়। আকাশচুম্বী অট্টালিকা, বিলাসবহুল হোটেল-শপিংমল, অত্যাধুনিক সব স্থাপত্য আর রাতের চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি যে কাউকেই মুগ্ধ করে।

সর্বোচ্চ ৮৩০ মিটার উঁচু বুর্জ খলিফার মতো বড় বড় অট্টালিকা, তার পা ছুঁয়ে কলকল রবে বহমান সুদৃশ্য ঝরনা ‘দুবাই ফাউন্টেন’, সাগরপাড়ের কৃত্রিম দ্বীপপুঞ্জ ও সর্বোপরি সংগীতের সুরের সঙ্গে নৃত্যরত চোখ ধাঁধানো রঙিন আলোকরশ্মি মানুষকে চুম্বকের মতো টানে। আর এসব কারণে দুবাই পর্যটক ভ্রমণপ্রিয়দের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।

দুবাইয়ের শেখ কারা

সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাত রাজ্যের মধ্যে জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি দুবাইয়ে। ৩৫ লাখ মানুষের বাস এখানে। তবে এর মধ্যে বিদেশিদের সংখ্যাই বেশি। শতকরা ৮৩ শতাংশ। বিদেশি নাগরিকের বেশির ভাগই আবার বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের। মাত্র ১৭ ভাগ আমিরাতি।

আরবের কোনো অঞ্চল বা এলাকার নেতা বা গভর্নরকে শেখ বলা হয়ে থাকে। দুবাইয়ে এমন তিনজন শেখ আছেন, যাদের হাতে শহরের শাসনভার ন্যস্ত। আবার শেখ হলো সিনিয়র নাগরিকদের প্রদত্ত একটি সম্মানসূচক উপাধি। দুবাইয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অনেককেই শেখ বলা হয়।

এক প্রতিবেদন মতে, দুবাইয়ে এমন শেখ রয়েছেন প্রায় ৫২ হাজার। এদের প্রত্যেকেই মিলিয়ন ডলারের মালিক। এ শেখরা রাজা-বাদশা তথা শাসক নন, তবে তাদের জীবনযাপন রাজা-বাদশাহদেরও হার মানায়।

আরাম-আয়েশে শেখদের জুড়ি নেই

দুবাই বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র ও বিলাসবহুল পর্যটন গন্তব্য, যা একে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর তালিকায় স্থান করে নিতে সাহায্য করেছে। তেলের পাশাপাশি বাণিজ্য, পরিবহন, পর্যটন ও শিল্প-প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে এর অর্থনীতি। বিশাল সেই অর্থনীতির বেশির ভাগই শেখদের নিয়ন্ত্রণে।

দুবাই শেখদের হাতে তাই অঢেল অর্থ। তবে অর্থ ও প্রাচুর্যের জন্য তারা যেমন বিশ্বজুড়ে খ্যাত, তেমনিভাবে নানা বিলাসবহুল ও অদ্ভূত সব শখের জন্যও তাদের বেশ পরিচিতি রয়েছে। কোনো কিছু একবার ভালো লেগে গেলে যত টাকাই লাগুক তা পূরণ করবেই তারা। এ ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে তাদের জুড়ি মেলা ভার।

দুবাই শেখরা নিজেদের বিশ্বের সবচেয়ে সেরা বিবেচনা করেন। শুধু তাই নয়, সময়ে সময়ে নিজেদের নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সেটা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন। দুবাই শেখরা বিশেষ করে স্বর্ণপ্রিয় মানুষ।

গাড়ি থেকে শুরু করে মোবাইল, এমনকি তাদের খাবারেও স্বর্ণের উপস্থিতি দেখা যায়। দুবাইকে ধনী শেখদের শহর বলা হয়। কারণে-অকারণে বিলাসিতা করা দুবাই শেখদের জীবনের একটি অংশ। শেখ ও তাদের সন্তানরা অন্যকে দেখানোর জন্যও কোটি কোটি দিরহাম খরচ করেন।

এটিএম বুথ থেকে টাকা নয়, বেরিয়ে আসে স্বর্ণের বার

সাধারণত এটিএম বুথ বসানো হয় জরুরি ও দ্রুত অর্থের প্রয়োজন মেটাতে। আর দুবাইয়ে এটিএম বুথগুলো বসানো হয় শেখদের দামি দামি শখ পূরণের নিমিত্তে। এটিএম মেশিন থেকে সাধারণত কাগজি মুদ্রাই বের হয়। কিন্তু দুবাইয়ের বুথগুলো থেকে টাকা নয়, বের হয় স্বর্ণের বার।

এটাকে তারা নাম দিয়েছে গোল্ড ভেন্ডিং মেশিন। নগদ টাকার বিনিময়ে আপনি ওই মেশিন থেকে ২৪ ক্যারেট খাঁটি সোনা সহজেই কিনে নিতে পারবেন। বিশ্ববাজারে সোনার দাম ওঠানামার কারণে প্রতি ১০ মিনিট পরপর মেশিনে মূল্য আপডেট করার সফটওয়্যার বসানো থাকে।

সোনার গাড়িতে ঘোরাঘুরি

ধনী কিংবা গরিব, বিশ্বের সব শহরেই কম-বেশি বিলাসবহুল ও দামি গাড়ি দেখা যায়। কিন্তু দুবাই এ ক্ষেত্রে একটা আলাদা শহর। এখানে রাস্তায় হরহামেশাই দেখা মেলে সোনার গাড়ি। অনেক সময় এসব গাড়ির চোখ ধাঁধানো ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। মানুষ সেগুলো দেখে বিস্মিত হয়। এসব গাড়ির একেকটার দাম শত শত কোটি ডলার। কারণ, সেগুলো বিশেষভাবে নকশা করা।

প্রশ্ন হতে পারে, এত দামি গাড়িতে কারা চড়ে? জবাবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, দুবাইয়ের শেখরা। এক হিসাবমতে, ১৯৬৮ সালে দুবাই শহরে মাত্র ১৩টি গাড়ি ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুবাই আজ গাড়ির শহরে পরিণত হয়েছে। শুধু সোনার গাড়িই নয়, শেখদের মোবাইল ফোনগুলোও সোনায় মোড়ানো। কখনো কখনো তাতে হীরাও বসানো হয়।

সোনার থালায় খাবার খায় শেখরা

দুবাইয়ের শেখদের খাবারের মধ্যেও স্বর্ণ থাকে। শেখদের পছন্দ-অপছন্দ মাথায় রেখে শহরের কিছু রেস্তোরাঁ এমন বিরল কিছু খাবার পরিবেশন করে, যাতে স্বর্ণের বাহারি ব্যবহার দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে হ্যাম্পস্টেড বেকারি ও ক্যাফে ইন দুবাইয়ের মতো রেস্তোরাঁর কথা বলা যায়। এই রেস্তোরাঁগুলোতে যে ফ্রেঞ্চ টোস্ট পরিবেশন করা হয়, তা ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের বিশেষ জালে মোড়া থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৪৫:৪৫   ১৬৫ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আন্তর্জাতিক’র আরও খবর


ইসরায়েলকে গাজায় অভিযানের ‘অজুহাত’ দিয়েছে হামাস : মাহমুদ আব্বাস
ফিলিস্তিনের সব অঞ্চলে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের আহ্বান আরব লীগের
গাজা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বাহরাইনে যাচ্ছেন আরব নেতারা
চীন সফরে আরো সহযোগিতার আশা পুতিনের
সৌদি পৌঁছেছেন ২১ হাজার হজযাত্রী
১২ ইসরায়েলি সৈন্যকে হত্যার দাবি হামাসের
স্লোভাক প্রধানমন্ত্রী ফিকো’র জীবন ঝুঁকিমুক্ত: উপ-প্রধানমন্ত্রী
পেরুতে বাস খাদে পড়ে ১৬ যাত্রী নিহত
ইন্দোনেশিয়ার বন্যায় প্রাণহানি বেড়ে ৫৭ জনে উন্নীত
ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলে হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া

News 2 Narayanganj News Archive

আর্কাইভ