পারফরমেন্স খারাপ হবার কারণে এবং দেশের ক্রিকেটের অবনতি রোধ করতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানালেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
আজ পল্টনে হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে ৩৫তম জাতীয় হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশীপ চলাকালীন সাংবাদিকদের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার অধীনে আমি ক্রিকেটের পতন হতে দিতে পারি না। বিসিবি থেকে আমাদের কিছু প্রত্যাশা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সভাপতি হিসেবে ফারুক আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পর পাকিস্তানের মাটিতে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতে বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর থেকেই পারফরমেন্সের অবনতি ঘটে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ফারুক ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। কোনও দুর্নীতির কারণে তাকে অপসারণ করা হয়নি। পারফরমেন্সের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘ক্রিকেট মাঠে কোন খেলোয়াড় যদি নিয়মিত ব্যর্থ হয় তাহলে কি তাকে নির্বাচকরা দলে রাখবে! এখানেও সেটা হয়েছে। এছাড়া ক্রিকেটের সাথে জড়িত স্টেকহোল্ডারদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছি।’
ক্রিকেটের বর্তমান পারফরমেন্স বিবেচনায় সভাপতির পদ থেকে ফারুক আহমেদকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানান বিসিবি পরিচালকরা।
ফারুক আহমেদের বিসিবি পরিচালক পদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করার পর আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে পরিচালক মনোনীত করে এনএসসি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিসিবির নয়জন পরিচালকের মধ্যে আটজন ফারুক আহমেদের বিপক্ষে অনাস্থা প্রকাশ করে এনএসসিতে চিঠি পাঠায়। এই মুহূর্তে মাত্র নয়জন পরিচালক আছেন। অন্যরা ৫ আগস্টের পর পালিয়ে গেছেন। বেশিরভাগ পরিচালক তার সাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না।’
তিনি আরও জানান, নেতৃত্বের পরিবর্তনের বিষয়টি আইসিসিকে জানানো হয়েছে। আইসিসিও এটিকে স্বাগত জানিয়েছে।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘অনেকেই আইসিসি থেকে নিষেধাজ্ঞার কথা বলছে। কিন্তু আমাদের আইসিসির সাথে যোগাযোগ রয়েছে। যিনি এখন সভাপতি (আমিনুল ইসলাম) হয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন আইসিসিতে কাজ করেছেন। কোন কমিউনিকেশন গ্যাপ আমাদের দিক থেকে নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান পরিস্থিতি আইসিসির অজানা নয়। নতুন নেতৃত্ব নিয়ে সাধুবাদ জানিয়েছে আইসিসি।’
তিনি জানান, আমরা দেখতে পাচ্ছি পারফরমেন্সের দিক দিয়ে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যাচ্ছে। এটিই হল বড় কারণ।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিসিবি পরিচালকদের এনএসসিতে লেখা চিঠি এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের একটি সিদ্ধান্তে আসতে হয়। একই সাথে বিপিএল সম্পর্কিত স্বাধীন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও বিবেচনা করা হয়েছে।’
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) চেয়ারম্যান এই উপদেষ্টা জানান, বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি দুর্বার রাজশাহীর অর্থ সংক্রান্ত বিষয় সরকারকে বিব্রত করেছে।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘অতীতের খারাপ রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও নিজের সিদ্ধান্তে বিপিএলে একটি দলকে সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি সরকারকেও ক্রিকেটারদের বেতন এবং হোটেল বিল পরিশোধের সাথে জড়িত থাকতে হয়েছিল।’
আইসিসির নির্দেশিকা অনুসারে নতুন বিসিবি সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে বলে জানান আসিফ মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘বিসিবির সংবিধান অনুসারে দু’জন পরিচালক মনোনীত করতে পারে এনএসসি। আমরা কোনও সভাপতিকে অপসারণ করিনি। আমরা পরিচালক মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, তার সভাপতির পদ চলে গেছে। বোর্ডের সংবিধান অনুসারে আমরা অন্য কাউকে মনোনীত করেছি এবং আইসিসির নির্দেশিকা অনুসারে বিসিবি আরেকজন সভাপতি নির্বাচিত করেছে।’
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ‘আমি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ভাইকে চিনি না। আমি ফারুক ভাই সম্পর্কেও জানি না। আমি ক্রিকেটের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলেছি। তাদের মতামতের ভিত্তিতে, আমরা প্রথমে ফারুক আহমেদকে এনএসসির মাধ্যমে নিয়ে এসেছিলাম।’
নতুন বোর্ড সভাপতি নিয়োগে সরকারি কোন হস্তক্ষেপ ছিল না বলে জানান আসিফ মাহমুদ, ‘প্রশাসনিকভাবে ভালো কাজ হয়নি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবনতি হচ্ছিল। এটি জাতীয় উদ্বেগের বিষয়। ক্রিকেটের উন্নতির জন্য আমরা আবারও বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে কোনও সরকারি হস্তক্ষেপ নেই। সরকারের দু’জন পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে। সরকার সেখানে পরিবর্তন এনেছে। এর ফলে, সভাপতি বদলে গেছে। সেখানে দ্রুত নতুন সভাপতি এসেছে।’
উপদেষ্টা জানান, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত এবং নতুন সভাপতির প্রশংসা করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৮:৩৭ ১৫ বার পঠিত