
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘সবার আগে রাষ্ট্রের তিনটা প্রধান অঙ্গ নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগের সমস্যার সমাধান করতে হবে। এই তিন বিভাগে সমস্যা রেখে কোনোভাবেই মানবাধিকার ঠিক রাখা যাবে না। আসল জায়গায় হাত দিতে হবে। আমরা এই জায়গাগুলো ঠিক করার চেষ্টা করছি।
আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত ১১তম মানবাধিকার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
আসিফ নজরুল বলেন, ১৯৯১ থেকে ২০১১-১২ সাল পর্যন্ত দেশে মোটামুটি ভালো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার এসেছিল। যার কারণে আমরা কিছুটা হলেও ভালোর দিকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। শেখ হাসিনার শাসনামলে ২০১৩ সালের সময়েও অনেকগুলো মেয়র নির্বাচনে অন্য দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। তখন পর্যন্ত স্বচ্ছতা ছিল।
আইন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে সেরা সময় কেটেছে ১৯৯১ থেকে ২০১২-১৩ পর্যন্ত। কারণ, তখন শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার হস্তান্তর ছিল। এটি থাকলে জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকে। তখন দেশ ভালোর দিকে এগিয়েছে। আমাদের দলগুলোর প্রত্যেকের সমস্যা আছে। কোনো দল যখন চিন্তা করে পাঁচ বছর পর ক্ষমতা হারাব, তখন ভয়ে হলেও তারা খারাপ কাজ কম করে। মানবাধিকার লঙ্ঘন কম করে। কোনো দলের ক্ষমতা হারানোর ভয় চলে গেলে তারা দানবে পরিণত হয়। যেটা আমরা বিগত আওয়ামী শাসনামল দেখলে বুঝতে পারি। যার কারণে এক হাজারের বেশি ছাত্র-জনতাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে পঙ্গু হতে হয়েছে। কত কঠিন ভয়াবহ মূল্য দিতে হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের আশার সঙ্গে বাস্তবতার মিল থাকতে হবে। আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। কিন্তু সেটি হঠাৎ করেই হবে না। ক্রমান্বয়ে আমরা ভালোর দিকে এগোব। ভালো মানবাধিকার পরিস্থিতির দিকে যাব। এ জন্য মানবাধিকার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি আগামী তিন-চারটা নির্বাচন যদি সঠিকভাবে করতে পারি, আইনগত প্রশাসনিক সংস্কার যদি সঠিকভাবে চলে, সবার মধ্যে মানবাধিকার চর্চার অনুশীলনটা যদি গড়ে ওঠে, তাহলেই আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। তিনি বলেন, মানবাধিকার বাস্তবায়ন খুবই কঠিন কাজ। অনেকে মনে করেন ভালো কিছু আইন করলেই বোধ হয় মানবাধিকার সমস্যার সামাধান হয়ে যাবে। আসলে হবে না। আসল জায়গায় হাত দিতে হবে। আমরা এই জায়গাগুলো ঠিক করার চেষ্টা করছি।
অনুষ্ঠানের আয়োজক হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) চেয়ারপারসন শাহজাদা আল আমিনের সভাপতিত্বে সংস্থাটির প্রধান উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী মো. নুর খান, জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় (ইউএনআরসিও) বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ একরামুল হক, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক সাইফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১:১৬:৩১ ৯ বার পঠিত