
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মিলনের প্রধান অতিথি ছিলেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
কুরআন তেলাওয়াত ও বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর বক্তব্যে অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া আন্দোলনকারীরা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা ২৪ জুলাইয়ের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া করা হয় এবং আহত ও শহীদ পরিবারের হাতে সম্মাননা স্মারক ও উপহার তুলে দেওয়া হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, “দীর্ঘ দেড় দশকের জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে এ দেশের দেশপ্রেমিক জনতা ও তরুণ ছাত্রসমাজ তাজা রক্ত ঢেলে যে ইস্পাত কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, আমরা সেই ঐক্য ধরে রাখতে চাই। শহীদেরা যে কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়নে আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। তাদের ত্যাগের ঋণ আমাদের শোধ করতেই হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে, যেখানে শোষণ-নিপীড়নের জায়গা থাকবে না। যারা গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের সম্মিলিত চেষ্টায়ই আমরা সে রাষ্ট্র গঠন করতে পারব।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, “পুলিশ দিয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার নানা নোংরা কাজ করিয়েছে। এখনো পর্যন্ত একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠিত হয়নি। আমি জানি না, কবে হবে। তবে যদি গণতন্ত্র ও শৃঙ্খলা সুপ্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে আবারও পুলিশকে ব্যবহার করা হতে পারে।”
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার জানান, “জুলাই-আগস্টের ঘটনায় করা হত্যা মামলার প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। তদন্তে দেখা গেছে, অনেক নিরীহ মানুষকেও মামলায় জড়ানো হয়েছে। এ মাসেই সেসব মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। নির্দোষ কেউ যেন শাস্তি না পায়, তা নিশ্চিত করাই আমাদের অঙ্গীকার।”
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ বলেন, “আমরা বারবার প্রমাণ করেছি, দেশের ক্রান্তিকালে আমরা দেশপ্রেমে উত্তীর্ণ হয়েছি। গত ১৫ বছর ধরে দেশকে জিম্মি করে রাখা অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর পতনের পর তার দোসররা এখনো সক্রিয়। যদি তাদের আইনের আওতায় না আনা হয়, তাহলে আবারও বিভাজন সৃষ্টি হবে।”
গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন বলেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, শহীদের মর্যাদার জন্য একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ দরকার। ২৪ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান নিয়ে যেভাবে দলীয় মালিকানা নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির মতো। এই আন্দোলন ছিল জনগণের, ব্যক্তির বা দলের নয়।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। তাদের সেই আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজন গণহত্যার বিচার, কাঠামোগত সংস্কার এবং জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা।”
আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, ‘আমরা চব্বিশে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে নেমেছিলাম একটা বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের জন্য। যেখানে সবার ভিন্নমত থাকবে৷ আমরা একটা সমতার বাংলাদেশ পাবো। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সচেতনতা ও জবাবদিহি থাকলে সে লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো। আমরা এর পাশাপাশি গণহত্যাকারীদের বিচার এবং আহত ও নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন চাই।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ড. এ এফ এম মুশিউর রহমান, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমাদ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জামায়াতে ইসলামীর নারায়ণগঞ্জ মহানগরের আমীর মাওলানা আব্দুল জব্বার, এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম -সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, ইসলামী আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ মুফতি মাসুম বিল্লাহ, এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু, ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা, ইসলামী ছাত্রশিবির নারায়ণগঞ্জ মহানগর সেক্রেটারি অমিত হাসান, যুব শক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক নীরব রায়হান সহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:১৩:৪৮ ৬ বার পঠিত