
জামালপুর প্রতিনিধি : জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় যমুনা নদের পাড়ের গুঠাইল পাইলিং পার এলাকায় নিজেদের দীর্ঘদিনের পৈতৃক পেশা ছেড়ে যাওয়ার হিড়িক চলছে জেলেদের মধ্যে। নদ-নদীতে মাছের আকাল হওয়ায় এবং জীবিকা নির্বাহের উপায় না পেয়ে এখানকার বহু জেলে জাল ফেলে দিয়ে এখন বিকল্প পেশা বেছে নিচ্ছেন।
গুঠাইল মাঝিপাড়ার মোহন চন্দ্র দাস, পুলক দাস, রমণী দাসসহ আরও কয়েকজন জেলে ইতিমধ্যেই জাল ছেড়ে দিয়ে ইজিবাইক চালাচ্ছেন। তাদের মতো আরও বহু জেলে বাধ্য হয়েই অন্য পেশায় গিয়ে জীবিকা নির্বাহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গুঠাইল পাইলিং পারে প্রবীণ জেলে নবীন চন্দ্র দাস (৫৬) জানান, “নদ-নদীতে তেমন মাছ নেই। জালে মাছ উঠছে না। আমরা নিরুপায় হয়ে পড়েছি। মাছ ধরে আর সংসার ঠিকমতো চালাতে পারছি না, তাই বাধ্য হয়েই অনেকে পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।” তিনি আরও বলেন, “নদ-নদীতে মাছ না থাকায় আমাদের কষ্ট বেড়ে গেছে। আমাদেরকে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।”
ফকিরপাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের এলাকার আপন চন্দ্র দাস (৩৬) জানান, “গেল দুই মাস ধরে ইজিবাইক চালিয়ে আয় করছি। আগে নদ-নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরে সংসার চালাতাম। জালের সঙ্গে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক, কিন্তু জাল দিয়ে আর সংসার চালানো যাচ্ছে না।”
উপজেলার যমুনা নদীর তীর এলাকার নগেন্দ্র দাস (৪৮) পৈতৃক পেশা আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইলেও স্বীকার করেন যে, মাছ না থাকায় জাল দিয়ে তাদের সংসার আর চলে না। তিনি বলেন, “নদ-নদীগুলো বছরের বেশিরভাগ সময় শুকনো থাকায় মাছের প্রজনন ঘটে না, আর সেজন্য আশানুরূপ মাছও পাওয়া যায় না। আমি প্রস্তুতি নিয়েছি জাল ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় যাব।”
ইসলামপুর উপজেলায় যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, দশআনি, হলহলিয়া বিল সহ ৬টি নদ-নদী পাড়ে প্রায় ১৮০টি জেলে পল্লী রয়েছে, যেখানে প্রায় ২৬২৬টি পরিবারের বসত। গুঠাইল পাইলিং এলাকার প্রবীণ জেলে যতীন চন্দ্র দাস (৭৭) বলেন, একসময় নদ-নদীতে প্রচুর মাছ ছিল এবং খাল-বিল ছিল উন্মুক্ত, ফলে জেলে পরিবারগুলোর কর্মসংস্থানের সুযোগ ছিল এবং তাদের ঘরে অভাব ছিল না।কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে।
তিনি জানান, প্রভাবশালীরা খাল-বিলগুলো লিজ নিয়ে মাছ চাষ করায় এবং নদ-নদীতে মাছ না থাকায় জেলে পরিবারগুলোর দুর্দিন চলছে। তার নিজের চার ছেলের মধ্যে দুজন ইতিমধ্যে জাল ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ করছে এবং অপর দুজনও একই প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
ইসলামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাকির হোসেন স্বীকার করেন, “দিন দিন পেশাদার জেলের সংখ্যা কমে আসছে।” তিনি এর কারণ হিসেবে বলেন, “জেলেরা কারেন্ট জাল দিয়ে মাছের পোনা শিকার করার কারণে নদ-নদীতে মাছের বৃদ্ধি হয় না।তাদেরকে সচেতন করা হচ্ছে।”
তিনি জানান, সরকারিভাবে যতটুকু প্রণোদনা আসে ততটুকু তাদের মাঝে বণ্টন করা হয়। তবে, প্রভাবশালীদের কারণে জেলেরা সরকারি খাল-বিলের লিজও নিতে পারেন না বলেও জানান মৎস্য কর্মকর্তা।
জেলেরা আশা করছেন, নদী-সংরক্ষণ এবং মাছের প্রজনন বৃদ্ধির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হলে তারা তাদের পৈতৃক পেশায় আবার ফিরতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৩০:৪৮ ১০৯ বার পঠিত